|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা সম্পর্কে বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মার কুৎসামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার কোলকাতায় এক ঐতিহাসিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ জনজোয়ার। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের প্রধান উদ্যোক্তা সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহঃ কামরুজ্জামান বলেন নবী সাঃ সম্পর্কে বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মার বক্তব্যের নিন্দা ও ধিক্কার জানাতে বেলা ১ টায় টিপু সুলতান মসজিদের পাশ থেকে একটি মিছিল ধর্মতলার রানী রাসমণি অ্যভিনুইয়ে পৌঁছায় এবং সেখানে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করা ছিল আজকের উদ্যোক্তাদের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ ! এই শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হয়ে নবী হজরত মহম্মদ সঃ এর অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ উঠেছে বলে জানান মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা জমিয়তে আহলে হাদিসের পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ সম্পাদক জনাব আলমগির সরদার । অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্বামী সত্যরূপানন্দ মহারাজ শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্টকারী নুপুর শর্মা নবীন জিন্দলদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। এদিন মিছিল ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পীরজাদা সৈয়দ আতিফ আলি আল কাদেরী, সমাজকর্মী অনন্ত আচার্য, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সভাপতি মাওঃ আনোয়ার হোসেন কাসেমী, আইনজীবী মোফাক্কেরুল ইসলাম, পীরজাদা সৈয়দ তাহফিমুল ইসলাম, পীরজাদা খোবায়েব আমিন সহ রাজ্যের বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় জেলা ও ব্লক স্তরের নেতৃত্ব।
এদিন মিছিল ও সমাবেশ থেকে বিভিন্ন বক্তাদের বক্তৃতায় উঠে এসেছে যে নবী হযরত মুহাম্মদ সা ও ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য গরল উদগীরণের বিরুদ্ধে এই তীব্র প্রতিবাদ।
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতবর্ষ। স্বাধীন ভারতের স্থপতি ও মহান রাষ্ট্র নায়করা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন দেশের বহুত্ববাদী চরিত্র অক্ষুন্ন রাখতে। মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণ করতে নয়। তারা উপলব্ধি করেছিলেন, এদেশে একমাত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাদের দূরদর্শী রাষ্ট্র নীতিমালার জন্য গত সাত দশকের বেশি সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভারতবর্ষে বড়ো কোনো অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেনি।
আজ যারা ক্ষমতাসীন তারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেনি। দেশের পবিত্র সংবিধান প্রণয়নেও তাদের পূর্বসূরিদের কোনো ভূমিকা নেই।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র পরিবর্তন করতে বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, তারা দেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে চায়। তাদের শাসন পদ্ধতি দেখে নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠ আধিপত্যবাদী অপশাসনের দিনগুলো স্মরণ হচ্ছে। জার্মানির সংখ্যালঘু ইহুদি নির্যাতন আর এখন এদেশে মুসলিম নির্যাতনের চরিত্র প্রায় অভিন্ন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যম ৭×২৪ মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ সশস্ত্র ভাড়াটিয়া বাহিনী মুসলিম বিরোধী সহিংস দাঙ্গার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশাসনের বড়ো অংশ নির্লজ্জভাবে মুসলিম বিরোধী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছে। গত আট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আতঙ্কের মধ্যে দিনরাত অতিবাহিত করছে।
দেশের এই রকম এক পরিমন্ডলে ভাড়াটিয়া ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলিম বিরোধী ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা প্রসার প্রায় স্বাভাবিক ব্যাপার। ভারতে শাসক দল বিজেপির মুখপাত্র কুখ্যাত নুপুর শর্মা ও নবিন জিন্দালের ইসলাম ও নবি হযরত মুহাম্মদের সা বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আক্রমণ মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ ঘোষণার সামিল। এই দুই ঘৃণ্য ক্রিমিনাল ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অধীনে কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
বিজেপি পরিচালিত মোদী সরকারের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ধৃষ্টতা ও অবজ্ঞার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, তারা দেশের কুড়ি কোটি মুসলমানের প্রতিবাদে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু গুটি কয়েক মুসলিম দেশের প্রতিবাদে সামাল সামাল অবস্থা! আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ধিক্কার জানাই।এই রকম এক সঙ্কটকালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের ভারতের বিরুদ্ধে কথিত হুমকির তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাই।দেশের সকল শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে সনির্বন্ধ নিবেদন, দেশের সর্বত্র বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখতে সদা সতর্ক থাকুন।