|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : নদিয়া গণধর্ষণকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য অসংবেদনশীল বলেলেন নির্ভয়ার মা। ২০১২ সালে দিল্লির গণধর্ষণকাণ্ডের শিকার নির্ভয়ার মা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি একটি ভিকটিম সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন তাহলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্য নন। এখানেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা বন্ধ করেননি তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, একজন নারী হয়েও কী করে এজাতীয় মন্তব্য করলেন? তিনি আরও বলেছেন, তিনি যে পদে রয়েছেন সেই পদে থেকে তাঁর এমন মন্তব্য করা শোভা পায় না।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য রীতিমত উষ্মা প্রকাশ করেছেন নির্ভয়ার মা। একাধিক প্রলোভন, হুমকি উপেক্ষা করেই তিনি মেয়ের বিরুদ্ধে হওয়ার অন্যায়ের প্রতীকার চেয়ে লড়াই করেছেন। নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার পথ কম লম্বা ছিল না। তাই ধর্ষণকাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজাতীয় মন্তব্য তিনি মেনে নিতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলছেন এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। এজাতীয় মন্তব্য এজাতীয় অপরাধকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে। এটি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রভাবিত করে। যারা এই ধরনের অপরাধ করে তাদের উৎসাহিত করে। তিনি আরও বলেন এজাতীয় মন্তব্য করে রাজনীতিকরা শুধু ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে পারেন। সোমবার বিশ্ববাংলা মেলা প্রঙ্গনে অতিথিদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়া গণধর্ষণকাণ্ডের কথা উত্থাপন করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন নদিয়ায় য়ে কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে তাতে কী বলা হবে – তা নিয়ে। তারপর তিনি নিজেই বলেন, ‘এটিকে আপনি কি ধর্ষণ বলবেন? সেকি গর্ভাবতী ছিল? তার তো একটি ছেলের সঙ্গে লাভ অ্যাফেয়ারও ছিল ?’ তারপরই তিনি বলেন তিনি পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন। যে ছেলেটির নামে অভিযোগ উঠেছে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে বলা ভালো যে ধৃত মূল অভিযুক্তের বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা। তাঁরই নির্দেশে নিহত কিশোরীর পরিবারেরস সদস্যরা চুপ করে রয়েছে। গোটা গ্রামও চুপ করে রয়েছে তৃণমূল নেতার ভয়। এদিন মমতা সেই প্রসঙ্গও উল্লেখ করে বলেন, ‘এখন সকলেই তৃণমূল কংগ্রেস করে।’ মমতা আরও বলেন, ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির একটি সম্পর্ক ছিল। তা নিয়ে পরিবারও অবগত ছিল। তিনি আরও বলেন কারও প্রেমের সম্পর্ক তিনি আটকাতে পারবেন না। একই সঙ্গে তিনি বলেন এটা উত্তর প্রদেশ নয়। এখানে লাভ জিহাদ হয় না। প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রয়েছে। তবে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে ও শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিহত নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন বন্ধুর আমন্ত্রণেই তার জন্মদিনে পার্টিতে গিয়েছিল ১৪ বছরের কিশোরী। সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ এক মহিলা ও দুইজন পুরুষ তাঁর মেয়েকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে যায়। যারা সেই রাতে বাড়িতে এসেছিল তাদের তিনি চিনতেন না। তাঁর স্ত্রীও চিনত না বলে জানিয়েছেন। রাতের দিকে মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার নিয়ে আসার আগেই মেয়ের মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন মূল অভিযুক্ত সমর গয়লার সঙ্গে তাঁর মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ সমরই জন্মদিনের অনুষ্ঠানের নাম করে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। কারণ সেদিন সন্ধ্যেবেলা যারা এসেছিল তারা রীতিমত হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। বলেছিলেন এই কথা জানাজানি হলে বাড়িতে আগুন দিয়ে দেওয়া হবে। কিছুটা ভয়ের কারণেই তাঁরা চুপ করে ছিলেন।