মূর্তি ছাড়াই সিংহ পরিবারের দুর্গোৎসব রামপুরহাটে

মহিউদ্দীন আহমেদ, রামপুরহাট: বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমার চাঁদপারা গ্রামে হচ্ছে ঐতিহ্যমান্ডিত দূর্গাপুজো। যে পুজোর বিশেষত্ব হলো এখানে মা দূর্গার কোন মূর্তি নেই। চাঁদপাড়া গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরে এই দেবী-হীন দূর্গাপুজো জেলার অন্যতম নজরকাড়া পুজো এবং ঐত্যিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যা অন্য বিশেষত্ব বহন করে আসছে। পরিবারের প্রবীণতম সদস্য শ্রী অচিন্ত্য সিংহ।শারীরিক অসুস্থতার জন্য বাড়ির পুজোতে উপস্থিত থাকতে পারেন না। সেই অর্থে পুজোতে উপস্থিত সদস্যগণের মধ্যে শ্রী তপন কুমার সিংহ হলেন প্রবীণতম সদস্য।

    বর্তমানে পুজো পরিচালিত হয় মুলত প্রয়াত লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহের দুই পুত্র শ্রী তপন কুমার সিংহ ও শ্রী দেবরন্জন সিংহ এবং শ্রী অচিন্ত্য সিংহের দুই পুত্র শ্রী দীপনারায়ণ সিংহ ও শ্রী গোপাল সিংহ – এই চার ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা। এই পুজোর বিশেষত্ব হলো এখানে মূর্তিপুজো হয়না। ঘট প্রতিস্থাপন করে তাকেই মা দুর্গা রুপে পুজো করা হয়। পুজো হয় মুলত নবমী ও দশমীর দিন। তবে দুর্গাপুজোর অন্যান্য দিনগুলোতেও মা কে পুজো নিবেদন করা হয় প্রাত্যহিক ও নিত্যপুজার মাধ্যমে। এই মন্দিরে পুজো শুরুর থেকে আজ অবধি নবমী পুজোর দিন মন্দিরের সামনে পাঁঠা, আখ বলিদান ইত্যাদির প্রচলন আছে।

    চাঁদপাড়া গ্রামের দুর্গাপুজো গুলির মধ্যে এই আদি সিংহ বাড়ির ॐ সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের দুর্গাপুজো অন্যতম প্রাচীন পুজো। আনুমানিক ৩৫০ থেকে ৪০০ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। কথিত আছে এই দুর্গাপুজো শুরুর দিকে মূর্তিপুজো রুপেই করা হত। কিন্তু এই বংশের ই কোনো পূর্বপুরুষ, বাল্যকালে তাঁর পিতা ও মাতাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন এবং তিনি তাঁর পিসিমার কাছে মানুষ হোন। এই অবস্থায় উক্ত পিসিমার পক্ষে ওই অনাথ বালকের বংশের দুর্গাপুজো চালিয়ে যাওয়া একপ্রকার সাধ্যের অতীত হয়ে ওঠে। কিন্তু দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যাবে, এটাও হতে পারেনা। এমতাবস্থায় সেই পিসিমা এই বিষয়ে তাঁর গুরুদেবের স্মরণাপণ্ণ হন, এবং তাঁর গুরুদেব আদেশ দেন মূর্তিপুজোর দায়িত্ব চাঁদপাড়া গ্রামেই বসবাসকারী সিংহ পরিবারের অন্যান্য জ্ঞ্যাতিগুষ্টি ও শরিকদের অর্পণ করে সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দিরের বেদীতে ঘট প্রতিস্থাপন করে তাঁকেই মা দুর্গা রুপে নবমী ও দশমীর দিন পুজো করতে। সেই ঘটনা থেকেই এই মন্দিরে ঘটপুজোর মাধ্যমে দুর্গাপুজোর শুরু যা নবমী ও দশমীর দিন হয়ে থাকে।

    দুর্গাপুজোতে তো বটেই, এছাড়াও সাড়াবছর ধরে চাঁদপাড়া গ্রামের ও আশেপাশের গ্রামের বহু মানুষ এই মন্দিরে কিছু না কিছু মানত করে থাকেন ও তাদের আশা পূর্ণ হয়েই থাকে।