নিয়োগপত্র নয়, হাতে এসেছে ভুয়ো ‘অফার লেটার’!

নিজস্ব সংবাদদাতা: চাকরির ‘নিয়োগপত্র’ আনতে যাচ্ছেন ছেলে। কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়েছিলেন মা। কয়েক ঘণ্টা পরে বুধবার সরকারি আইটিআই কলেজ থেকে ছেলে জানালেন, ‘নিয়োগপত্র’ নয়, হাতে এসেছে ভুয়ো ‘অফার লেটার’!

    গোঘাটের রকি ঘোষালের মতো একই অভিজ্ঞতা হুগলি জেলার আরও অনেকের। অভিযোগ, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শতাধিক যুবক-যুবতী মঙ্গল ও বুধবার ওই ‘ভুয়ো’ চিঠি পেয়েছেন। সরকারি দফতরের মাধ্যমে কী ভাবে এমন আজব চিঠি পৌঁছল, সেই প্রশ্ন উঠছে। উত্তর নেই। ভুয়ো চিঠির অভিযোগ নিয়ে জেলা আইটি বিভাগের নোডাল অফিসার তথা এইচআইটি কলেজের অধ্যক্ষ সৌমিত্র সাহা মন্তব্য করেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার, রাজ্য স্তর থেকে বলবে।’’ জেলা ‘উৎকর্ষ বাংলা’র নোডাল অফিসার রাখি বিশ্বাসও বলেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’

    চাকরিপ্রার্থীরা জানান, নিয়োগপত্র দেওয়ার নামে সোমবার বাসে চাপিয়ে তাঁদের কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও, নিয়োগপত্র মেলেনি। পরে জানানো হয়, বুধবার হুগলি আইটিআই এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ওই চিঠি সংগ্রহ করে চাকরিপ্রার্থীরা দেখেন, সেটি নিয়োগপত্র নয়। গুজরাতে সুজ়ুকি মোটরের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকা সংস্থায় মাসিক ১১ হাজার টাকা ভাতায় ‘ভেহিকল টেকনিশিয়ান’ হিসেবে দু’বছরের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছাড়পত্র। বুধবারই সকাল ১০টার মধ্যে গুজরাতে শিবিরে যোগ দিতে হবে।সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে চাকরিপ্রার্থীরা চিঠি পান। অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে চিঠিতে থাকা মোবাইল নম্বরে সংস্থার আধিকারিককে ফোন করেন। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা এমন চিঠি পাঠাননি। শুনে তাঁরা আকাশ থেকে পড়েন।

    হাজিপুর ইউনিয়ন হাইস্কুল থেকে বৃত্তিমূলক শাখায় উত্তীর্ণ রকির মা তৃপ্তি ঘোষাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে বলা, সরকারি কলেজ থেকে চিঠি পাওয়ার পরেও এ রকম হতে পারে!’’ রকির বাবা রতনের পান-চায়ের দোকা‌ন। ছেলের চাকরি পাওয়ার কথা বড় মুখ করে পাঁচ জনকে বলতে শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁর গলায় কার্যত অবিশ্বাস, ‘‘সরকারি স্তরে এত বড় ধাপ্পা হতে পারে না। হয়তো কোনও গোলমাল হয়েছে। ফের নিশ্চয়ই ডাকবে।’’আরামবাগ মহকুমা থেকে ২১ জনের নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁদের মধ্যে খানাকুলের গৌড়ান গ্রামের অতনু বাগীশ বলেন, ‘‘চিঠি পেলাম শিবিরে যোগ দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে। বিষয়টি জানতে চিঠিতে থাকা নম্বরে ফোন করতে বলা হয়, চিঠি ভুয়ো।’’ একই কথা বলেন আরামবাগের ডিহিবয়রা গ্রামের সৌম্যদীপ বিশ্বাস, চাঁপদানির সুশীলকুমার যাদব, ভান্ডারহাটির সৌভিক মণ্ডল, গোঘাটের পিয়ালি ঘোষালরা। ভদ্রেশ্বরের শ্যামসুন্দর চিল্ড্রেন হাই স্কুলের পাঁচ ছাত্রীর মধ্যে চার জন বুধবার দুপুরে স্কুল থেকে চিঠি নিয়ে আসেন। এক জন বলেন, ‘‘খুব খারাপ লাগছে।’’

    চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা গত ১৬ অগস্ট স্কুল থেকে চাকরির খবর পেয়ে একটি লিঙ্কে অনলাইনে আবেদন করেন। ২৫ অগস্ট যাদবপুরের একটি টেকনিক্যাল কলেজে ‘জব ফেয়ার’-এ ইন্টারভিউ দেন। মগরার বাগাটি রামগোপাল ঘোষ হাই স্কুলের ৯ ছাত্র স্কুল থেকে বুধবার দুপুরে ওই চিঠি পান। এক ছাত্রের ক্ষোভ, ‘‘কারিগরি শিক্ষা দফতর আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’’চাকরিপ্রার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলি এইচআইটি থেকে ফোনে তাঁদের বলা হয়, গুজরাতের ওই সংস্থায় এইমূহুর্তে যোগ দেওয়ার দরকার নেই। কারিগরি শিক্ষা দফতর এ নিয়ে কথা বলছে। সেখান থেকে বলারপরে তাঁরা যেন যোগ দেন। এক চাকরিপ্রার্থী জানান, তিনি ভুয়ো চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করলে বলা হয়, সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে।

    ফোন পেয়ে কেউ কেউ আশায় বুক বাঁধছেন।