|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ‘হম দো, হামারে দো’ স্লোগানের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে অবশেষে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে রাশ টানা সম্ভব হলো। শুধু তা-ই নয়, এই প্রথম দেশে সংখ্যার বিচারে পুরুষদের ছাড়িয়ে গেলেন নারীরা।
জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার (NFHS) পঞ্চম দফার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেশের টোটাল ফার্টিলিটি রেট (TFR) এখন ২.০। আন্তর্জাতিক ভাবে রিপ্লেসমেন্ট লেভেল ফার্টিলিট রেটের মানদণ্ড হলো ২.১, অর্থাৎ এক প্রজন্মের চলে যাওয়ার পর, পরবর্তী প্রজন্মের সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য RTFR ২.১ হলেই যথেষ্ট, ভারতের ক্ষেত্রে সেটা আরও কম। অর্থাৎ, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গ্রাফ এখন নিম্নমুখী- একজন মহিলা গড়ে দু’টি করে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। TFR-র এই হার দেশে বেনজির। আবার এই প্রথম দেশে পুরুষদের থেকে মহিলার সংখ্যা বেশি হলো। প্রতি হাজার পুরুষে এখন দেশে রয়েছেন ১,০২০ জন মহিলা।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে রাশ পড়ার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অল্পবয়সি নারী বা পুরুষের সংখ্যা দেশে কমের দিকে। ফলে, একদিক থেকে দেখলে ভারত ‘বৃদ্ধ’ও হচ্ছে বই কী! তবে এই ‘বার্ধক্য’ দুশ্চিন্তার নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। নীতি আয়োগের (স্বাস্থ্য) সদস্য ভিকে পলের ব্যাখ্যা, ‘সমীক্ষায় পরিষ্কার, মজবুত উন্নয়নের দিকে দেশের গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।’ এ-ও বোঝা যাচ্ছে, জনবিস্ফোরণের যে আশঙ্কা কিছু মহল থেকে করা হচ্ছিল, আপাতত তার আশঙ্কাও নেই।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ফার্টিলিটি রেটের বিচারে একেবারে উপরের দিকে রয়েছে বাংলা, তালিকায় দ্বিতীয়। শীর্ষে থাকা জম্মু-কাশ্মীরে টিএফআর ১.৪, বাংলায় ১.৬। দিল্লি, পাঞ্জাবেও তা-ই। অর্থাৎ জাতীয় গড়ের থেকে অনেকটাই নীচে। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে টিএফআর ২, জাতীয় গড়ের সমান। ঝাড়খণ্ড (২.৩), উত্তরপ্রদেশ (২.৪) এবং বিহারের (৩.০) মতো রাজ্যে টিএফআর জাতীয় গড়ের থেকে বেশি।
তবে সমীক্ষার চতুর্থ দফা (২০১৫-১৬) থেকে পঞ্চম দফায় (২০১৯-২১) প্রায় প্রতিটি রাজ্যে টিএফআর কমেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হ্রাস জম্মু-কাশ্মীরে (২.০ থেকে ১.৪)। মাত্র দু’টি রাজ্যে টিএফআর বেড়েছে- কেরালা (১.৬ থেকে ১.৮) এবং তামিলনাড়ু (১.৭ থেকে ১.৮)। দেশের গ্রামাঞ্চলে (২.১) অবশ্য ফার্টিলিটি রেট শহরাঞ্চলের (১.৬) থেকে বেশি। সমীক্ষার প্রধান ইনভেস্টিগেটর কেএস জেমসের বক্তব্য, ‘এখন দেশে দু’জন বাবা-মায়ের দু’টি সন্তান। এ ভাবে এগোলে এমন একটি দিন আসবে যখন আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হবে শূন্য। সেটি এখনই হবে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতাবস্থা আসতে চলেছে।’
ভালো খবর রয়েছে জনসংখ্যার অনুপাতেও। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতকে এখন আর ‘কান্ট্রি অফ মিসিং উইমেন’ বলা যাবে না। ১৯৯০ সালে ‘নিউ ইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস’-এ একটি নিবন্ধে এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি যখন এই মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন দেশে নারী-পুরুষ অনুপাত ৯২৭:১,০০০। NFHS-এর পঞ্চম দফার রিপোর্ট বলছে, সেই অনুপাত এখন ১,০২০:১,০০০। এর আগে ২০০৫-০৬ সালে NFHS ৩-এর রিপোর্টে দেশে নারী-পুরুষ অনুপাত ছিল সমান। কিন্তু ২০১৫-১৬-র NFHS ৪-এ তা কমে ৯৯১:১,০০০-তে দাঁড়ায়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা বিকাশ শীল বলেন, ‘প্রকৃত সংখ্যা এবং অনুপাত আদমসুমারির পরেই বোঝা যাবে। কিন্তু এই সমীক্ষায় এটুকু অন্তত স্পষ্ট, নারী ক্ষমতায়নে নেওয়া বিবিধ উদ্যোগ আমাদের সঠিক দিশায় নিয়ে যাচ্ছে।’