|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম : করোনা আবহের মাঝেই আবারও এক জঙ্গলমহলে একশিক্ষকের মানবিক মুখ দেখলো বাংলার মানুষ।রাত পোহালেই শিক্ষক দিবস। শিক্ষক দিবসের ঠিক প্রাক্কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনকে অনুদান দিলেন এক শিক্ষক। কোরোনা অতিমারির উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যেই এক শিক্ষকের আবার মানবিক মুখ দেখল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। গোপীবল্লভপুর এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত নয়াবসান জনকল্যান বিদ্যাপীঠের সংস্কৃতের শিক্ষক হেরম্বনাথ চক্রবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে রামকৃষ্ণ মিশনের ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক মহারাজের হাতে কুড়ি হাজার টাকার চেক তুলে দেন। শিক্ষার উন্নতিতে শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে এহেন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা সকলের।
সম্পাদক মহারাজ জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহনের জন্য হেরম্ববাবুর মতো একজন শিক্ষকের এইভাবে এগিয়ে আসা এক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসরা গ্রামে বাড়ি। তাঁর বাবা পণ্ডিত তারানন্দ চক্রবর্তী ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার জাম্বনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক। ২০০১ সালের এই ৫ ই সেপ্টেম্বর দিনটিতেই তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নতুন দিল্লির ‘বিজ্ঞান ভবন’এ পেয়েছিলেন ‘জাতীয় শিক্ষক’এর বিরল সম্মান। বাবার পুরস্কার পাওয়াকে স্মরণে রাখতে গরিব ছাত্র ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন ছেলে।
২০০৪ সালে বাঁকুড়া জেলার পাঁচমুড়া মহাবিদ্যালয়ে ‘অতিথি অধ্যাপক’ হিসেবে হেরম্ববাবু তাঁর কর্ম জীবন শুরু করেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার “বৈষ্ণব তীর্থ ” হিসেবে পরিচিত গোপীবল্লভপুর ব্লকের নয়াবসান জনকল্যান বিদ্যাপীঠে সংস্কৃত শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। প্রায় ১৪ বছরেরও কিছু বেশি সময় তিনি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে চলেছেন।
রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, আদিবাসী পড়ুয়াদের আবাসিক স্কুল ‘একলব্য’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েক বছর আগেই অধিগ্রহন করেন রামকৃষ্ণ মিশন। পরবর্তী ক্ষেত্রে শহরের উপকণ্ঠে সত্যবানপল্লীতে প্রায় পাঁচ একর জমির উপর বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা করেন ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন। তার মধ্যে রয়েছে নতুন আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান, ছাত্রাবাস নির্মান, প্রার্থনা ঘর নির্মান প্রভৃতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে হেরম্ববাবু নিজে থেকেই ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। এই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহনের আবেদন জানিয়ে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
এই প্রসঙ্গে উল্ল্যেখ্য, কোরোনা মহামারি এবং আমফান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যখন জঙ্গলমহলের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো, সেই সময় এই জোড়া বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষের সেবা কার্যের জন্য ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ঝাড়গ্রাম জেলার পুখুরিয়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজ এর হাতেও কুড়ি হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাবাও দিয়েছিলেন পঞ্চাশ হাজার টাকা।
হেরম্ববাবু জানান, বাঁকুড়া বিশ্বপ্রেমিক সঙ্ঘের অধ্যক্ষ স্বামী প্রশান্তানন্দ মহারাজজীর অনুপ্রেরনাতেই এই রকম সেবামূলক কার্য তিনি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছেন। দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য পাঠ্যপুস্তক বিতরন এবং আর্থিক সাহায্য প্রদান, তাঁর এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতি ছাত্র ছাত্রীদের সম্বর্ধনা দেওয়া, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ, বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজ, বাঁকুড়া সারদামনি মহিলা মহাবিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গ্রন্থাগারগুলিতে, সংস্কৃত অনার্স ও পাসকোর্সের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্য সহায়ক পুস্তক প্রদান প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার জনহিতকর কার্যের সাথে তিনি যুক্ত। আগামী দিনে এই ভাবেই এগিয়ে যেতে চান বলে জানান তিনি।
শিক্ষা দানের পাশাপাশি জনহিতকর সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যেভাবে তিনি এগিয়ে চলেছেন, তাতে করে এলাকার ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে শুরু করে প্রতিটি সমাজ সচেতন নাগরিকই তাঁদের “প্ৰিয় স্যার” এর জন্য গর্ব অনুভব করে। এবারের শিক্ষক দিবস যেন অন্য ধারায় প্রতিপালিত হতে চলেছে এক অনন্য শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায়।