|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- শ্রাবণ মাস উপলক্ষে এখন ভক্তদের ঢল বর্ধমানের প্রাচীন একশো আট শিব মন্দিরে। এই মাসের প্রতি সোমবার উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে দর্শনার্থীদের। শুধু এই রাজ্যের বাসিন্দারাই নন, বহু পুণ্যার্থী আসছেন বাইরের রাজ্য থেকেও। কিন্তু এক সময়ের জঙ্গলময় বর্ধমানের এই নবাবহাট এলাকায় কেন গড়ে তোলা হয়েছিল এই মন্দিরমালা – তা জানেন কি? বর্ধমানের মহারানি বিষণকুমারী বর্ধমান শহর লাগোয়া নবাবহাটে ১০৮ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। শেষ হয়েছিল ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় বর্ধমান সংলগ্ন নবাবহাট এলাকায় ব্যাপক মহামারি দেখা দিয়েছিল। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই মহামারিতে। এই এলাকার বাসিন্দারা স্বজনদের হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিলেন । এলাকায় মন্দির গড়ে বাসিন্দাদের ঈশ্বরমুখী করে তাঁদের শোক ভোলাতে চেয়েছিলেন বর্ধমানের মহারানি।সেই ভাবনা থেকেই নবাবহাটে এই একশো আট শিব মন্দির গড়ে তোলেন তিনি। মহাআড়ম্বরে সেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময় এই মন্দির নির্মাণে এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। জপমালার আদলে ১০৮টি এবং অতিরিক্ত আর একটি, মোট ১০৯টি স্থাপত্যকে গেঁথে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই মন্দির। এই ১০৯তম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধুদের উপস্থিতি ঘটেছিল। তাঁদের পদধূলি রাজপরিবার একটি সোনার কলসিতে সংরক্ষণ করে রেখেছিল।মন্দিরগুলির গঠন একই রকমের। ওড়িশার বালেশ্বরের মন্দিরের আটচালার নকশার আদলে নির্মিত সেগুলি। মন্দিরগুলির অবস্থান যেমন পাশাপাশি, তেমনি প্রতিটি মন্দিরের সামনেই আছে খোলা টানা বারান্দা। প্রতিটি মন্দিরই একটি দরজার। সব মন্দিরেই রয়েছে কষ্টি পাথরের গৌরীপট্ট-সহ শিবলিঙ্গ। প্রতিষ্ঠার সময়ে সবগুলি মন্দিরের সামনেই একটি করে বেল গাছ রোপন করা হয়েছিল। এখনও বেল গাছের আধিক্যে সবুজ মন্দির চত্বর। এছাড়াও মন্দিরগুলির মাঝে দুটি জলাশয় খনন করা হয়। দর্শনার্থীরা যাতে স্নান সেড়ে শুদ্ধ হয়ে পুজো দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।