বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের হস্টেলে সকলের সামনে অবাধে চলত র‍্যাগিং: অভিযোগ এক সদ্য প্রাক্তন ছাত্রের

নিজস্ব সংবাদদাতা : খাবার খেতে না দিয়ে, কখনও মারধর করে, কখনও আবার ঘরের মধ্যে মূত্রত্যাগ করেও রেহাই নেই। কলার ধরে উপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে অত্যাচার-র‍্যাগিং। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে আনলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুট অ্যান্ড ফাইবার টেকনোলজির সদ্য প্রাক্তন এক ছাত্র। অভিযোগ, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের হস্টেলে সকলের সামনে অবাধে চলত র‍্যাগিং। নয় নয় করে অন্তত ৫-৬টি জায়গায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি। নির্যাতিত ছাত্রের অভিযোগ, এক দু’সপ্তাহ নয়, অন্তত তিন বছর ধরে লাগাতার এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।গত ৮ জুলাই এ নিয়ে বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই পড়ুয়া। শনিবার আলিপুর আদালতে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। ওই ছাত্রের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে হস্টেলে একদল সিনিয়র এবং বহিরাগত তাঁর উপর লাগাতার অত্যাচার চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এমনও হয়েছে আমার ঘরে বোমাবাজি পর্যন্ত করেছে ওরা।’ ছাত্রের বক্তব্য, ‘আমি হস্টেল সুপারকে সব বলি। তিনি কোনও অভিযোগ নিতে চাননি। বিভাগীয় প্রধানের ঘরের ঢুকে আমাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা অভিরূপ চক্রবর্তী হুমকি পর্যন্ত দেয়।’তাঁর দাবি, এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছেও অভিযোগ করেন। এরপর রাজ্যপাল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় তপসিলি জাতি-উপজাতি কমিশন থেকে ইউজিসি সবার কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাননি। অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু খবর প্রকাশ্যে আসার আগে অবধি পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করেনি বলে অভিযোগ। যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘র‍্যাগিংয়ের কোনও অভিযোগ নয়। বোঝাপড়ার কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।ওঁর অভিযোগ আগের সেক্রটারির কাছ থেকে শুনেছি। ওঁর খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে বা এমন ঘটনা সত্য নয়।’ কলকাতা পুলিশ সূত্রের দাবি, র‍্যাগিংয়ে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে জমা পড়েনি। যে অভিযোগ জমা পড়েছিল তার ভিত্তিতেই ধারা প্রয়োগ করে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও ওই ছাত্রের দাবি, এই ঘটনার জন্য তাঁর পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেননি।এখন তাঁকে হতাশা-অবসাদ দূর করার ওষুধ থেকে হচ্ছে। যে অভিরূপের নাম এই ঘটনায় সামনে চলে এসেছে, তিনি আবার দিন দুয়েক আগেই যাদবপুরের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে চলা টিএমসিপির ধর্নায় যোগ দিয়েছিলেন। অভিরূপ অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘এটা এসএফআইয়ের চক্রান্ত। ওই ছেলেটি এসএফআইয়ের সক্রিয় সদস্য।পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’ অভিরূপ নিজের দাবির সপক্ষে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠিয়ে দাবি করেন, এসএফআইয়ের মিছিলে সদস্যপদ সংগ্রহে দেখা গিয়েছে অভিযোগকারী পড়ুয়াকে। যদিও নির্যাতিত ছাত্রের দাবি, ইস্যু ভিত্তিক কিছু বিষয়ে তিনি এসএফআইয়ের মিছিলে হেঁটেছেন। তাঁর কথায়, ‘এমন ইস্যুতে মিছিল তৃণমূল করলে আমি সেখানেও হাঁটতাম।’