|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ক্রিকেটে প্রচলিত রয়েছে, ক্যাচেস উইন ম্যাচেস। ক্যাচ ধরো ম্যাচ জেতো। বৃহস্পতিবার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অজি ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফস্কে ম্যাচ ফস্কাল পাকিস্তান। শুধু কালকের ম্যাচে নয়, এর আগেও বিশ্বক্রিকেটে ক্যাচ ছেড়ে ম্যাচ ছাড়ার নজির রয়েছে। থুড়ি,বলা ভাল বিশ্বকাপের মহামঞ্চে ক্যাচ ফস্কে দলকে ডুবিয়েছেন অনেকেই। বৃহস্পতিবারের হাসান আলি ব্য়তিক্রম নন।
১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। সেবার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে পাকিস্তানের পুনর্জন্ম ঘটেছিল বিশ্বকাপে। ফাইনালে ইমরান খান নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে নিয়ে যান তিন নম্বরে। চাপের ম্যাচে গোটা চাপ শুষে নিতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক ইমরান। সেই কারণেই নিজে গিয়েছিলেন উপরে। কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হতেই পারত। ইংল্যান্ড অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ ফেলে দেন ইমরানের ক্যাচ। আর তার ফল হাতে নাতে পেয়েছিল ইংল্যান্ড। ইমরান লড়াকু ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। স্লগ ওভারে ঝড় তুলেছিলেন ইনজামাম উল হক ও ওয়াসিম আক্রম। মেলবোর্নের মাঠে পাকিস্তানের ২৪৯ রান তাড়া করতে নেমে ২২৭ রানে থেমে যায় ইংল্যান্ড। অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে দুটো স্বপ্নের ডেলিভারিতে বোল্ড করেন আক্রম। সেই ফাইনালের কথা বলতে গিয়ে আজও অনেকে গুচের ক্যাচ ফেলার কথা বলে থাকেন।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্টিভ ওয়ার ক্যাচ ছেড়েছিলেন হার্শেল গিবস। জীবন ফিরে পাওয়ার পরে গিবসের কাছে গিয়ে ওয়া বলেছিলেন, ”মেট ইউ হ্যাভ জাস্ট ড্রপড দ্য ওয়ার্লড কাপ।” সত্যি সত্যিই তাই হয়েছিল। গিবসের ওই ক্যাচ ফেলার খেসারত দিতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল প্রোটিয়াদের। ওয়ার সেই মন্তব্য ক্রিকেটের লোকগাথায় জায়গা করে নিয়েছিল। আজও কেউ ক্যাচ ছাড়লে দেওয়া হয় গিবসের উদাহরণ। উত্থাপ্পন করা হয় ওয়ার সেই আইকনিক মন্তব্য।
২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে শচীন তেন্ডুলকরের ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হারে পাকিস্তান। ওয়াসিম আক্রমের বলটা ঠিকঠাক মারতে পারেননি শচীন। আক্রম মিড অফে দাঁড় করিয়েছিলেন আবদুর রজ্জাককে। অভিজ্ঞ বোলার আক্রমের কথা না শুনে রজ্জাক এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তার ফল ভুগতে হয় পাকিস্তানকে। শচীনের মারা শটটা সেই মিড অফেই গিয়েছিল। শচীনের উইকেট নেওয়ার জন্য মরিয়া ছিলেন আক্রম। ‘মাস্টার ব্লাস্টার’কে ফেলে দেওয়ায় নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি আক্রম। রজ্জাকে তিরস্কার করে আক্রম বলে উঠেছিলেন, ”তুঝে পাতা হ্যায় তুনে কিসকা ক্যাচ ছোড়া হ্যায়?” জীবন ফিরে পাওয়ার পরে ধ্বংসলীলা চালান শচীন। ভারত-পাক ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলে রজ্জাকের ক্যাচ ফেলার কথাও উঠে আসে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনায়।
২০১৫ বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের দলের স্বপ্নপূরণ অবশ্য হয়নি। তবুও হৃদয় জিতে নিয়েছিল কিউয়িরা। সেবারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মার্টিন গাপ্তিলের ক্যাচ ফেলেছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। কোয়ার্টার ফাইনালে কিউয়িদের মুখোমুখি হয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। গাপ্তিল সেই ম্যাচে ডাবল হান্ড্রেড করেছিলেন। গাপ্তিলের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন স্যামুয়েলস। তখন গাপ্তিল ব্যাট করছেন মাত্র ৪ রানে। বেঁচে যাওয়ার পরে গাপ্তিল খেলেছিলেন ২৩৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। নিউজিল্যান্ড করে ৩৯৩ রানের পাহাড়প্রমাণ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে যায় ২৫০ রানে।
২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টু্র্নামেন্টের শুরু থেকেই উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলে পাকিস্তান। সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিঞ্চ। ১৭৬ রান করে পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে একসময়ে আস্কিং রেট বাড়ছিল অজিদের। স্টোয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড ম্যাচ প্রলম্বিত করছিলেন। শেষের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচ। ১৯-তম ওভার করেন শাহিন আফ্রিদি। নাটকীয় ওভারে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলেন হাসান আলি। কেউ বলছেন বলের গতিপথ ঠিকমতো বুঝতে পারেননি হাসান আলি। কেউ আবার বলছেন, চোখে আলো পড়েছিল বলে বল ছিটকে যায় হাত থেকে। হাসান আলি ক্যাচ ছাড়ার পরে শোয়েব মালিক দৌড়ে এসে কিছু একটা বলে যান তাঁকে। জীবন ফিরে পেয়ে ম্যাথু ওয়েড নক আউট করে দেন পাকিস্তানকে। তিন ছক্কায় ওয়েড ম্যাচ নিয়ে যান অজিদের সাজঘরে। পাক অধিনায়ক বাবর আজম পরে বলেন, ”অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে একটা সুযোগ দিয়ে দিলে ওরা ম্যাচ নিয়ে চলে যাবে। হাসান আলি যদি ক্যাচটা ধরে ফেলত তাহলে ম্যাচের ফলাফল হয়তো অন্যরকম হতেও পারত। প্লেয়ারকে সবসময়ে তৈরি থাকতে হয়, যা সুযোগ পাওয়া যাবে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমরা ভুল করেছি আর সেই ভুলের খেসারত দিতে হল।”
দুরূহ ক্যাচ ধরে ম্যাচ জেতার নজিরও রয়েছে বহু। কে ভুলতে পারেন ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ ফাইনালে কপিলদেব নিখাঞ্জের সেই ক্যাচ। ভিভ রিচার্ডস নির্দয় ভাবে মারছিলেন ভারতীয় বোলারদের। মদনলালের বলটা তুলে মেরেছিলেন রিচার্ডস। কপিল দাঁড়িয়েছিলেন শর্ট মিড উইকেটে। বল শূন্যে দেখে কপিল ছুটতে শুরু করেন। তাঁর চোখ ছিল বলের দিকে। এক মুহূর্তের জন্যও বলের গতিপথ থেকে চোখ সরাননি কপিল। রিচার্ডস নিজেও হয়তো বিশ্বাস করতে পারেননি কপিল ধরে ফেলবেন তাঁকে। তার পরের ঘটনা ইতিহাস। লর্ডসের বারান্দায় বিশ্বকাপ তুলেছিলেন কপিল। মুখে লেগে ছিল সেই সরল হাসি। ভারতীয় ক্রিকেট সাবালক হয়েছিল সেদিন।