|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল লোকসভার জামুড়িয়া বিধানসভার পাণ্ডবেশ্বর থানার খনি শিল্পাঞ্চলের প্রাচীন গ্রাম আলীনগরে শতাব্দী প্রাচীন মনসা মন্দিরের পুনর্নিমাণ করা হল । বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে মহামায়া মন্দির থেকে মনসা মন্দিরে ১০৮ জন ঢাকি সহ একশো আট জন মহিলা কলস সহ গঙ্গাজল বহন করে আনেন। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উৎসবের মেজাজে সেজে ওঠে পুরো গ্রাম। আপামর ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় নিমশা খোট্টাডিহি আলীনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবলু মণ্ডল জানান, গ্রামের মানুষের উদ্যোগে ও আর্থিক সহায়তায় প্রায় আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে মায়ের মন্দির পুনঃস্থাপন করা হল।
পাণ্ডবেশ্বর থানার অন্যতম প্রাচীন গ্রাম আলীনগর। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন বর্ণের মানুষ বসবাস করেন। এলাকায় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে আলীনগর রয়েছে শীর্ষ স্থানের কাছাকাছি। গ্রামে শিক্ষার হার এবং চাকরিজীবি মানুষের সংখ্যা ভালোই। অবশ্য গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা চাষবাস। বৃষ্টি নির্ভর কৃষি কাজে সারা বছরে সময় মেলে অনেকটা। হাতে কাজ না থাকলে মানুষ মেতে ওঠেন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছোট্ট গ্রাম। একটা গ্রাম পঞ্চায়েত আসন। তবে গ্রামে রয়েছে ছ’টি মন্দির। দুর্গামন্দির, শিবমন্দির, কালীমন্দির, সরস্বতী মন্দির, লক্ষ্মী মন্দির, পুনঃস্থাপিত হল মনসা মন্দির।
রাজনীতির দলাদলি আলীনগরে নেই। নেই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ। পাশের নিমশা গ্রামের ঈদগাহ্ রয়েছে এখানে, গ্রামের মাঝে উঁচু চূড়ার ওপরে। সেখানে তারা বছরে দু’বার নামাজ পড়ে যান। সারা বছর দেখভাল করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরাই। কোনও মুসলিম এই গ্রামে নেই। কোনদিন ছিলও না। আসলে, আলীনগরে ধার্মিক মানুষের সংখ্যা বেশি। প্রতি বছরই সংকীর্তনের বিশাল আয়োজন হয় আলীনগরে। তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো – – আজ আমার প্রাণনাথ আসবেন যে…। ঈশ্বর প্রেমের লীলাভূমি হয়ে ওঠে মানবপ্রেমের সংসার। পঞ্চদশ শতকে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পর বেশ কয়েকটি পূজা বাংলার সমাজ জীবনে প্রসার লাভ করে। তার অন্যতম হল মনসা পূজো।
সেই আলীনগরে উৎসবের রংয়ে সম্পন্ন হল মনসা মন্দির পুনঃস্থাপন পর্ব। শুধুমাত্র আলীনগর গ্রামের মানুষ নন, বিভিন্ন গ্রামের মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। শিক্ষক বাবলু মণ্ডল জানান, উৎসব-আয়োজনে আলীনগরের মানুষ সবসময়ই এককাট্টা। সেজন্য এখানে যেকোনো অনুষ্ঠানই উৎসব হয়ে ওঠে।