|
---|
রাজা মিয়া,নতুন গতি,মুর্শিদাবাদ: এক আত্মীয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে গত সোমবার সাতসকালে গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গিয়ে দেখি ওয়ার্ড জুড়ে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থার একশেষ। তারই কিছু খন্ডচিত্র বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেব বলে ছবি তুলছিলাম। রে রে করে তেড়ে এল একটি অল্প বয়সী ছেলে। দেখে মনে হলো চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। ধরে নিয়ে গেল কর্তব্যরত দু’জন সিস্টারের কাছে। তারা আমার মেয়ের বয়সী। যা ছবি তুলেছি সব ডিলিট করে ফেলার নির্দেশ দিলেন। ‘মৃত আত্মীয়ের ছবি’ বলে রেহাই পাওয়া গেল।
এখন প্রশ্ন হলো, হাসপাতালে ছবি তোলা কি নিষিদ্ধ ? সেরকম কোনও বিজ্ঞপ্তি কোথাও দেখিনি! আর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যদি হয়ও, তাহলেও তা মানতে আমার বয়ে গেছে ! সামান্য একজন সাংবাদিক হিসেবে যেখানে যা অসঙ্গতি দেখব, বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থে তা জনসমক্ষে তুলে ধরা আমার নৈতিক কর্তব্য বলেই মনে করি।
সেদিন হাসপাতালে দেখলাম একেকটি বেডে দু’জন করে রোগী রেখেও রক্ষে হয়নি। ওয়ার্ডের মেঝে এবং বাইরের করিডোরেও প্রচুর রোগী। তাদের কারও কারও স্যালাইনও চলছে। বেডের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা সব সময়ই কম থাকে। রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে , অথচ পরিকাঠামো বাড়ছে না। স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মীর পক্ষে এত চাপ সামলে সঠিক পরিসেবা দেওয়া বাস্তবিকই অসম্ভব। সুতরাং পরিকাঠামোগত ঘাটতির চিত্র জনসমক্ষে এলে নার্স বা চিকিৎসা কর্মীদের আপত্তির কী আছে ?
বাড়তি চাপ নিতে গিয়ে কী সমস্যা হয় দেখুন।আমার আত্মীয়কে দু’বোতল রক্ত দিতে বলেছিলেন ডাক্তারবাবু। প্রথম বোতল দেওয়ার পরে দ্বিতীয় ‘রিকুইজিশন স্লিপটি’ খুঁজে পাননি কর্তব্যরত সিস্টাররা। ডাক্তারবাবু আসার পর তাঁকে দিয়ে নতুন করে লিখিয়ে নিয়ে রক্ত দিতে দেরী হয় প্রায় বারো ঘন্টা ! রোগী মারা যায়। কে বলতে পারে সময় মতো রক্ত দেওয়া হলে রোগী বাঁচতো কিনা !
সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থা এমনই যে মরেও মানুষের শান্তি নেই ! মৃতের গায়ে পা তুলে দিয়েছে ঘোরের মধ্যে থাকা জীবিত রোগী ( ছবি দেখুন )। মৃতদেহকে জীবিতদের সাথে রেখে দেওয়া হয়েছে টানা চার ঘন্টা ধরে ! এটা কি কোন সুস্থ-স্বাভাবিক ব্যবস্থা ?!