“শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ মন ভরিয়ে দেয় পিঠে-পুলির স্বাদ কথা গান ও কবিতায়

শরীফুল ইসলাম, নতুন গতি,

    পিৎজা,বার্গার এগরোল চাউমিন আরো কত রকমারি বিদেশী খাবার দখল নিয়েছে বাজার।
    সন্ধ্যার পর পথে ঘাটে ভ্রাম্যমান স্টলে ওয়েস্টার্ন পোঁচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই সব গোগ্রাসে গিলছে কিশোর-কিশোরী মায় বয়ঃবৃদ্ধ।

    এ দৃশ্যটাই এখন মোস্ট পপুলার । তবু কেন জানিনা মনে হয় , ‘স্বাদ না মিটিলো , আশা না পুরিলো।’…
    বাড়ির মা-মাসি, পিসি, দিদিমা-ঠাকুমার কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যাই সেই সব দিনের কথা। যত্ন করে তাঁদের হাতে গড়া পিঠে পুলি ধুপি, দুধ আসকে সরুচুকলি।

    তথাকথিত আধুনিকতা আর অভিনবত্বের মোড়কে একান্নবর্তী পরিবারের সাথে সাথে বাঙালির সেই চিরন্তন ঐতিহ্য যা আজ লুপ্তপ্রায়।
    তবে সাধ যদি হয় আন্তরিক , পূরণ তো হতেই হবে কারো না কারো হাত ধরে। ঘটলও তাই,

    বাংলার সেই হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি-ঐতিহ্য কনকনে ঠান্ডায় সাত সকালে বা সন্ধ্যার পর রাত্রির গভীরতায় বাড়িতে বসে ঢেঁকী ছাটা চালের আটার পিঠে -পুলি , টাটকা খেজুর রস জাল দিয়ে তৈরি নলেন গুড়ের সঙ্গে বেশ উপভোগ্য ছিল। যার স্মৃতি উস্কে দিলো আজকের পিঠে পুলির মেলায়।


    শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে। সঙ্গে লিটলম্যাগ, হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য সম্ভার। মঞ্চে গান, কবিতা , কথা ও সুর আপ্লুত করলো উপস্থিত দর্শক ও উদ্যোক্তাদের। নস্টালজিক‍্যাল আবেশে গোটা মেলা প্রাঙ্গণ ভরে গেল। শান্তিপুরেরই ‘আলোকবর্ষ’ সহ বেশ ক’য়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গত দু দিন ব্যাপী পালিত সুরে ছন্দে পিঠে পুলির আনন্দ উৎসবে মুখরিত হলো আনন্দের শহর ,উৎসবের শহর শান্তিপুর।

    খুব সাধারণ ভাবে অসাধারণ এই আয়োজন টি কে প্রাণবন্ত করতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় কবি , সাহিতিক, নদী আন্দোলের সঙ্গে যুক্ত কর্মী থেকে শুরু করে নাট্য আন্দোলনের নেতৃত্ব সর্বোপরি শান্তিপুরের আম জনতা।

    মেলায় সবুজ কলম পত্রিকা নিয়ে স্টল দিয়ে অংশ নেয় শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব, নদিয়ার যুগবার্তা , নদিয়ার অগ্রনী প্রতিবন্ধী সংগঠন সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

     

    শান্তিপুর লাইব্রেরী মাঠে সারি সারি রঙিন ছাতার নিচে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের হাতের তৈরি পরিবেশিত নানা রকমের শীতকালীন পিঠে-পুলি,আশঁকে, ধুপি , চালের আটার রুটি , নলেন গুড়ের বিভিন্ন পদ সহ দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য পণ্যের প্রদর্শন ও তা বিপণনের কাজ যা সত্যিই দর্শনীয় ও প্রশংসনীয়।

    মেলা শুরু হয় শুরুবার থেকে। চলবে আজও।
    পুরাতনের স্মৃতিমেদুরতার সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের ভাবনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।এ মেলা যেন অতীত ও বর্তমানের মেলবন্ধন এক অনবদ্য সম্মিলনী।