|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : একদিকে পাহাড় সমান ঋণের বোঝা অন্যদিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছানোর লক্ষ্য। অদম্য জেদ ও অনবদ্য সাহসিক মানসিকতার পরিচয় দিয়ে অক্সিজেন ছাড়াই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছালেন হুগলির চন্দননগরের মেয়ে পিয়ালী বসাক। পিয়ালির সাফল্যে গর্বিত হুগলি তথা সমগ্র বাংলা। ছোটো বেলায় কিশলয় বইয়ে এভারেস্ট অভিযান পড়ে পাহাড়ের প্রতি টান অনুভব হয়েছিল পিয়ালির। তেনজিং নোরগে এডমন্ড হিলারিরা যে ভাবে পৃথিবীর সর্বচ্চ চূড়ায় উঠেছিলেন সেই কাহিনীও রোমাঞ্চিত করেছিল তাকে। এর পর মা-বাবার হাত ধরে ছয় বছর বয়স থেকেই ট্রেকিং শুরু। পাহাড়ে ওঠার নেশা পেয়ে বসে। ২০০০ সালে ১ লা আগস্ট অমরনাথ অভিযানে গিয়ে জঙ্গি হামলা খুব কাছ থেকে দেখা। কেদারনাথে গিয়ে মেঘভাঙা বৃষ্টি ,তুষার ধ্বস থেকে জীবন হাতে করে শুধু বেঁচে ফেরা নয় ,প্রায় একশ জন তীর্থযাত্রীকে বাঁচানোর অভিজ্ঞতা পাহাড়ের সঙ্গে আরো নিবিড় সম্পর্ক তৈরী করেছে তার। সেই মেয়েই পৃথিবীর সপ্তম উচ্চ শৃঙ্গ ধৌলা গিড়ি জয় করেন অক্সিজেন ছাড়া গতবছর ১ লা অক্টোবর। তার আগে ২০১৮ সালে অষ্টম শৃঙ্গ মানাসুলু জয় করেন। যে চূড়ায় উঠতে গিয়ে অনেক পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়েছে সেই ধৌলাগিড়ি দেশের মধ্যে প্রথম অসামরিক মহিলা হিসাবে জয় করেন পিয়ালি। সেই মেয়ে এবার অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় করে নজির তৈরি করলেন। ২০১৯ সালে এভারেস্টের ৮৪৩০ মিটার পর্যন্ত উঠে ফিরতে হয়েছিল তাকে। এবার প্রায় অক্সিজেন ছাড়াই পৃথিবীর সর্বচ্চ শিখরে চন্দননগরের এই পর্বতারোহী।এভারেস্টের ৮৮৪৮ মিটারের মধ্যে ৮৪৫০ মিটার তিনি পৌঁছান কোনো রকম কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই। বাকি রাস্তায় আবহাওয়ার অবনতির জন্য তাকে কৃত্রিম অক্সিজেন ব্যাবহার করতে হয়। যেখানে কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে পারেন না শেখানে কৃত্তিম অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টর ৮৫৪০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছনো নজির বিহীন ঘটনা। স্বভাবতই গর্বিত তার পরিবার। চন্দননগরের কানাইলাল প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করেন পিয়ালী। যে স্কুলে পর্বতারোহীদের পোশাক সামগ্রী প্রদর্শনি হত।ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে পহাড়ে চড়ার জন্য বুট দড়ি নেবার জন্য বায়না করত। সেই স্কুলেই এখন শিক্ষিকা সে। নিজে খুব ভালো আঁকতে পারেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন,আইস স্কেটিং এ রাজ্যের প্রথম মহিলা খেলোয়ার। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে কথাটা চন্দননগরের পিয়ালীর জন্য প্রযোজ্য। বাবা তপন বসাক অসুস্থ ,তাকে নিয়ে হাসপাতাল দৌড়াদৌড়ি, বাড়ির দোকান বাজার সবই করতে হয়। পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ঋণ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তার পরেও হাল ছাড়েননি পিয়ালী। ছেলেবেলায় বইয়ে পড়া এভারেস্ট অভিযান এবার নিজেই করে সাফল্য পেয়েছে পিয়ালী। ভারতীয় সময় রবিবার সকাল সারে আটটায় এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে যান পিয়ালী। নেপালের এজেন্টের মারফত খবর পান পিয়ালীর বোন তমালী। মাকে জানাতে মেয়ের জন্য খুশিতে চোখে জল চলে আসে মায়ের। অসুস্থ বাবা মেয়ের এত বড় সাফল্য কিছুই উপলব্ধি করতে পারলেন না।