ফ্লাইওভার থেকে আহত প্রৌঢ় বাইক আরোহীকে উদ্ধার করল ট্রাফিক সার্জেন্টে

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ২১শে জুন, শুক্রবারের ঘটনা। গোটা শহর জুড়েই তখন মুষলধারে বৃষ্টি। দুপুরে অন্যান্য দিনের মতোই টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ। সেই সময়ই দেখতে পান, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ফ্লাইওভারের উপরে একজন বয়স্ক মানুষ ও একজন বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে। দু’জনেই হাত দেখিয়ে চলন্ত গাড়িদের থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনও গাড়িই দাঁড়াচ্ছে না। বয়স্ক মানুষটির হাতে ক্রাচ স্টিক, সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। বোঝাই যাচ্ছে, চোট রয়েছে তাঁর। একপাশে কাত হয়ে পড়ে রয়েছে একটি স্কুটার।

    বয়স্ক মানুষ দু’জন ছিলেন ফ্লাইওভারের উল্টোদিকের রাস্তায়। মাঝে ২ ফুট চওড়া ডিভাইডার। সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ প্রথমে ডিভাইডারের কাছে এগিয়ে এসে কী ঘটেছে জানতে চান! বয়স্ক মানুষটি জানান, তাঁর স্কুটারের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। হাতে চোট থাকায় তিনি স্কুটারটা তুলতেও পারছেন না। এদিকে স্কুটারটিকে কোনও গ্যারেজে নিয়ে যেতেই হবে। অনেক চেষ্টা করেও কোনো গাড়ি দাঁড় করাতে পারেননি তিনি আর তাঁর স্ত্রী মিলে। টানা বৃষ্টিতে আপাদমস্তক ভিজেও গেছিলেন দু’জনে। দৃশ্যতই অসহায় লাগছিল তাঁদের।

    পিছল রাস্তায় ঝুঁকি নিয়েই ডিভাইডার টপকে অন্য পারে চলে আসেন সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ। টেনে তোলেন স্কুটারটিকে। কথাবার্তায় জানতে পারেন, বয়স্ক মানুষটির নাম অরূপ সরকার। বাড়ি গড়িয়ায়। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতেই ফিরছিলেন তিনি। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড ফ্লাইওভারে ওঠার পর হঠাৎই টায়ার পাংচার হয়ে যায় স্কুটারের। এই বছরের শুরুতেই একটি দুর্ঘটনায় ডান হাত আর ডান পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন অরূপবাবু। তারপর থেকে ভারী ওজন আর তুলতে পারেন না তিনি। বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়েই বাধ্য হয়ে তাই সাহায্যের জন্য ফ্লাইওভারের অন্যান্য গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিলেন দু’জনে মিলে।

    এরপর ফ্লাইওভার ধরে আসা একটি টেম্পোকে দাঁড় করান সার্জেন্ট দীপ্তিময়।সেই টেম্পোতেই তুলে দেওয়া হয় স্কুটারটিকে। সস্ত্রীক অরূপ সরকারকেও সেই টেম্পোতে বসার ব্যবস্থা করে দেন সার্জেন্ট। কাছেই একটি গ্যারেজে স্কুটারের টায়ার মেরামত হয়ে যায় দ্রুতই। অরূপবাবু এরপর যাতে নির্বিঘ্নে সস্ত্রীক বাড়ি ফিরতে পারেন, তা-ও নিশ্চিত করেন দীপ্তিময়।

    রইল সস্ত্রীক অরূপ সরকারের ছবি। সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষেরও।