শিক্ষকের ভূমিকায় পুলিশ

নতুন গতি প্রতিবেদক : সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ, বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে ডিউটি করার সময় প্রতিদিনই বছর আটের একটি বাচ্চাকে আশেপাশে খেলাধুলা করতে দেখেন। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সে, তার মা পাশেই রাস্তার ধারের একটি খাবারের দোকানে কাজ করেন। ফুটপাথেই জীবন মায়েপোয়ের। একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় বেশ কষ্ট করেই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন একটি সরকারি স্কুলে। সন্তানকে নিয়ে অনেক আশা আকাঙ্খা মায়ের, কিন্তু ছেলের পড়াশোনার প্রতি অনীহা হয়ে উঠছিল চিন্তার কারণ। কর্মস্থান কাছাকাছি হওয়ায় প্রকাশকে চেনেন তিনি। একদিন কথায় কথায় প্রকাশের কাছে নিজের উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করে ফেলেন মা।

    সব শুনে সাধ্যমতো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন প্রকাশ। তবে তিনি যে বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেবেন, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেননি ওই মা। যেদিন যেদিন ওখানে ডিউটি থাকে, নিয়ম করে পড়াতে বসান বাচ্চাটিকে। সুযোগসুবিধা অনুযায়ী পড়ানোর সময় বের করেন, কোনোদিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনোদিন ডিউটি শেষ করে। বাড়ির কাজ অর্থাৎ হোমওয়ার্ক দেওয়া এবং তা দেখে দেওয়া, বানানের ভুল শুধরে দেওয়া, উচ্চারণ, মায় হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক করে দেওয়া, সবটাই করেন প্রকাশ। গায়ে উর্দি এবং পায়ে গেটার্স থাকায় বসতে অসুবিধে হয়, তাই একটি গাছের সরু ডালের সাহায্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়ান, ডালটিকে পড়ানোর ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করেন।

    ছেলের ক্রমাগত উন্নতির ফলে মায়ের অসীম আস্থা জন্মেছে ‘শিক্ষক’ প্রকাশের ওপর। আপাতত তাঁর দুই কর্তব্যই সমান দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন সার্জেন্ট নিজেই।