থানায় জল চাইলে নিজের মূত্র পান করতে বলল যোগী রাজ্যের পুলিশ,১০দিন পর প্রমাণের অভাবে চারজনকে রেহাই

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক; নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল, এই অভিযোগে দিন দশেক আগে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মুজাফফরনগরের কিছু বাসিন্দাকে। তাদের মধ্যে চারজনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে কোনও প্রমাণ দেখাতে না পেরে।
গত ২০ ডিসেম্বর রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের করণিক হিসেবে কর্মরত ৫০ বছর বয়সি ব্যক্তি ও তার ২০ বছর বয়সি তরুণ পুত্র। অভিযোগ, সেসময় যোগী রাজ্যের পুলিশ বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারপর তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা নাকি ২০ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে যে গণ্ডগোল হয়েছে তাতে তারা জড়িত। তাদের ঠিকানা হয়েছিল মুজাফফরনগরের জেল। কিন্তু তার দশদিন পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মুজাফফরনগরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী প্রতিবাদ সভার সঙ্গে কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। এর পর ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাতটা নাগাদ আতিক আহমেদ (২৪), মুহাম্মদ থালিদ (৫৩), শোয়েব থালিদ (২৬) এবং সরকারি অফিসে কর্মরত এক করণিককে মুজাফফরনগর জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে মুজাফফরনগরের পুলিশ সুপার সতপাল আন্তিল বলেন, ফৌজদারি মামলার ১৬৯ ধারায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় ও চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তারা খুব নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি কারও বিরুদ্ধে পাথর ছোড়া বা ভাঙচুরের ঘটনায় যুক্ত থাকার প্রমাণ না পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আন্তিল বলেন, করণিকের বাড়ির ছাদ থেকে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। অন্যরা ভেবেছিল এটা বিক্ষোভকারীদেরই অংশ। তিনি অবশ্য বন্দিদের মারধর করার কিংবা খাবার ও জল না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। শুধুমাত্র বিক্ষোভ দমনে লাঠি চালানো হয় বলে তিনি জানান।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ করেন, তখন রাত সাড়ে দশটা। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর জানতে পারেন তাদের বাড়ির গেট ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ৬০জন পুলিশের দল এবং ৫০জন অচেনা ব্যক্তি ভেঙ্গে সব তছনছ করে দিয়েছে। তার পায়ে ও কাঁধে উপর্যপরি লাঠি মারতে তাকে তারা।
তিনি আরও বলেন, তাদের কোনও কথাই বলতে দেয়নি পুলিশ। তার নিজের ও ছেলেকে জোর করে তুলে পুলিশভ্যানে তোলা হয়। তারপর থানা নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী ফোনও নিয়ে নেওয়া হয়। থানায় দেখা গেছে প্রায় ১০০জন রয়েছেন। পুলিশ তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করতে থাকে। আমাদেরকেই খাবার ও জল দেওয়অ হয়নি। পুলিশের কাছে যখন জল চাওয়া হয় তখন বলে, তোমরা তোমাদের মূত্র পান করো।
তিনি আরও জানান, ২১ ডিসেম্বর কোর্টে তোলার পর তাকে ও তার ছেলেকে জেলে পোরা হয়। তার ছেলে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেছে এবং দিল্লির একটি হোটেলে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করছিল। যদিও তিনি বলেন, তার ক্ষত সারানোর জন্য ওষুধ পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারছেন না কেন তাদের সঙ্গে এমনটা করা হল। কারণ, তিনি সাতপাঁচে থাকেন না। অফিসে কাজ করেন আর সোজা বাড়িতে চলে আসেন। কোনওদিন তিনি ও তার ছেলে কোনও বিক্ষোখে অংশ নেননি। এমনকী যেদিন জেল থেকে মুক্তি পান সেদিন মুক্তি পেয়ে সোজা অফিসে গিয়েছিলেন।
আতিক আহমেদ-এর ঘটনা আরও মর্মান্তিক। দিল্লির জাকির হুসেন কলেজের বিএসসি পাঠরত আতিক গিয়েছিলেন তার আব্বার মেডিক্যাল রিপোর্ট আনতে। তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তখন তার পারিবারিক ডাক্তারের কাছ থেকে আসা ফোন আসে আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। তিনি পরামর্শ দেন অবিলেম্বে মীরাটের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
রাত সাতটা নাগাদ আতিক তার আব্বা মুহাম্মদ হারুন (৬২) ও মা রুখসানাকে নিয়ে বাগি থেকে মীরাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন হারুনের ভাগ্নে খালিদ (৫৩) ও তার স্ত্রী ফিরদৌস এবং তার ছেলে শোয়াইব (২৬)যারা ওই শহরটা ভালবাবে চেনেন। কিন্তু মিনিট কুড়ি পর পুলিশ মীনাক্ষী চকে আটকে দেয়। গাড়ি আটকে বলে আর যেতে দেওয়া হবে না। এরপর পুলিশ আতিককে দেখিয়ে বলে, এই সেই ব্যক্তি যে পাথর ছুড়ছিল।
হারুন গাড়ি থেকে বাইরে বের হলে পুলিশ বলে, তিনি যে রোগী তা তাকে প্রমাণ করতে হবে। সব রিপোর্ট দেকানের পরও তারা যেতে দিল না। তারা আইডেন্টি কার্ড দেখতে চাইল। মহিলার কাতর আর্জি সত্ত্বেও পুলিশ টানতে টানতে বাসে তুলল। তারা জানতে পারেননি তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরদিন জানতে পারেন তারা থানার মধ্যে রয়েছেন।