আত্মহত্যার মুখ থেকে এক নাগরিককে ফিরিয়ে আনল কলকাতা পুলিশ

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক। গতকাল ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই। হঠাৎই ফেসবুক থেকে একটি নোটিফিকেশন যায় সাইবার পুলিশ থানার দপ্তরে। দেখা যায়,একজন ব্যক্তি কলকাতারই কোনও একটি ফ্লাইওভারের ওপরে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভ করছেন। তাঁর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে,তীব্র মানসিক অবসাদের শিকার। ফেসবুক লাইভে সেই ব্যক্তি জানাচ্ছেন,একটু পরেই ফ্লাইওভার থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ করে দেবেন।

    এই লাইভ দেখার পর এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট করেননি সাইবার থানার সাব-ইনস্পেকটর রাজা সাহা। কোন ফ্লাইওভারের ওপরে তিনি দাঁড়িয়ে, ফেসবুকে লাইভে তার কোনও উল্লেখ করেননি সেই ব্যক্তি। ভদ্রলোকের ফেসবুক প্রোফাইল দেখে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁর ২টি মোবাইল নম্বর চটজলদি জোগাড় করেন রাজা। প্রথমটি সুইচড অফ, দ্বিতীয় নম্বরে ফোন করলে এক মহিলা ফোন তোলেন এবং জানান,তাঁর কাছেই একসময় গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ওই ব্যক্তি। ওই মহিলার কাছ থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ির ঠিকানাও ততক্ষণে জেনে নিয়েছেন রাজা। জানা হয়ে গেছে, তিলজলার পিকনিক গার্ডেনে পরিবারের সঙ্গেই থাকেন মানুষটি।

    ইতিমধ্যে সাইবার থানার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়ে গেছে কসবা থানার সঙ্গেও। খবর পেয়েই কসবা থানার সাব ইনস্পেকটর রনি অধিকারী দ্রুত পৌঁছন পিকনিক গার্ডেনে সেই ব্যক্তির বাড়িতে।অন্যদিকে প্রযুক্তি-প্রহরার মাধ্যমে মানুষটির তৎকালীন অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলেন কসবা থানার সাব ইনস্পেকটর প্রবাল বিশ্বাস। জানা হয়ে গেছে,বন্ডেল গেট রোডের ফ্লাইওভারে দাঁড়িয়ে আছেন সেই ব্যক্তি।

    পিকনিক গার্ডেনের বাড়িতে পৌঁছেই রনি সেই ব্যক্তির মা-কে বলেন, ছেলেকে দ্রুত ফোন করতে। ফোনে তাঁকে ব্যস্ত রাখলে খানিকটা সময় মিলবে। তার মধ্যেই তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে কসবা থানার অন্য টিম। পরিকল্পনাটি খেটেও যায় দারুণভাবে। মায়ের সঙ্গে যখন কথা বলতে ব্যস্ত সেই ব্যক্তি, ততক্ষণে বন্ডেল গেট রোড ফ্লাইওভারে পৌঁছে তাঁকে খুঁজে পেয়ে গেছেন সাব ইনস্পেকটর প্রবাল বিশ্বাস। ঘড়িতে তখন রাত ১০.৩০।

    এরপর মানুষটির সঙ্গে কথা বলে তাঁকে আত্মহত্যা থেকে বিরত করার চেষ্টা শুরু করেন সাব ইনস্পেকটর প্রবাল। দীর্ঘক্ষণ কথা চালানোর পর আত্মহত্যার পরিকল্পনা থেকে বিরত হন মানুষটি। তাঁকে বাড়িতে পৌঁছেও দিয়ে আসেন প্রবাল।

    দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি।পেশায় গাড়িচালক।অবসাদের ভার বইতে না পেরেই গতকাল রাতে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন মানুষটি। তাঁর ফেসবুক লাইভের নোটিফিকেশন আসতে যদি সামান্যও দেরি হত, তাহলেই হয়ত আর বাঁচানো সম্ভব হত না তাঁকে।

    অসামান্য তৎপরতাএবং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে মানুষটিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন কসবা থানার দুই সাব ইনস্পেকটর রনি অধিকারী এবং প্রবাল বিশ্বাস। নিচে থাকল তাঁদের ছবি। সাইবার থানার সাব ইনস্পেকটর রাজা সাহার ছবিও থাকল। যিনি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অঘটন ঘটে যেতে পারত।