|
---|
উজির আলী, নতুন গতি, চাঁচল: লকডাউনে ভিনরাজ্য থেকে ফিরেও মেলেনি প্রকৃত শ্রমিকদের চালের কুপন । বঞ্চিত শ্রমিকদের আনাগোনা প্রতিনিয়ত পঞ্চায়েত দপ্তরে। অবশেষে শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কাছে নাম না থাকার বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহী হন। বুধবার এই প্রয়াস সম্পন্ন করতে পঞ্চায়েত দপ্তরে শ্রমিকরা পৌঁছাতেই তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। বুধবার দূপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের তৃণমুল পরিচালিত ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরের মূল ফটকে।
শ্রমিকদের অভিযোগ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের আত্মীয় স্বজনদের রেশন তালিকায় নাম রয়েছে। এই অনিয়মের অভিযোগ তুলে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে সামিল হয়েছিলেন পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক কূপনে বঞ্চিত হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা বলে খবর।
কিন্তু পঞ্চায়েতে উপস্থিত হতেই শ্রমিকদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের একদল কর্মী- সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় পঞ্চায়েত দপ্তরে। ইট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বিজেপির এক সংখ্যালঘু মোর্চা মন্ঠল সভাপতির বলে অভিযোগ। এদিন শ্রমিকদের মারধর করে পঞ্চায়েত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে বলেছেন বিজেপি।
এবং ঘটনার জেরে শ্রমিক সহ একদল বিজেপি কর্মী পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালিয়েছে এমনই অভিযোগ করছেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের সাথে বিজেপিরাও পঞ্চায়েতে চড়াও হয়। উদ্যত হয়ে ভেঙেছে চেয়ার, বৈদ্যুতিন যন্ত্রণাংশ সহ ছিড়ে ফেলেছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র।এমনই অভিযোগ করছেন তৃণমূল পরিচালিত ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা মন্ডল সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম।
স্থানীয়দের তৎপরতায় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চায়েতের বাইরের চত্বর।
ঘটনার খবর পেয়ে খরবা ফাঁড়ি থেকে পঞ্চায়েতে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ। থমথমে হয়ে যায় পঞ্চায়েতের পাশাপাশি এলাকাগুলিও।
রেশন কূপনের তালিকা তৈরিতে বেনিয়মের অভিযোগ মানতে চাননি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সৈয়দ আরিফ। তিনি বলেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় তালিকা প্রদান করছেন পঞ্চায়েতে। সব পরিযায়ী শ্রমিক কূপন পাবে। তবে এভাবে বিজেপি ও শ্রমিকরা পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালাবে সেটা মানা হবে না। পঞ্চায়েতের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ব্লক দপ্তরে জানানো হয়েছে।
প্রকৃত শ্রমিকরা যাতে কুপন পান তা পঞ্চায়েতকে সুষ্ঠ ভাবে দেখতে বলা হয়েছে। তবে ভাঙচুরের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। কি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রমান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন চাঁচল ১ নং ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য।
ভিনরাজ্য ফেরত শ্রমিকরা মাসিক ৩০ কেজি চাল ও ২ কেজি ছোলা পাবেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
ব্লক এলাকার সব পঞ্চায়েতে তাদের কুপন দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু কুপন বিলি শুরু হতেই তালিকায় প্রকৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের নামহীনের অভিযোগকে ঘিরে ধুন্ধুমার শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন পঞ্চায়েতের তালিকায় বিত্তবান থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, তৃণমূল নেতা, পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে বা আত্মীয়ের নাম রয়েছে বলেও অভিযোগ তীর ছুরছেন বিজেপি।
ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভিনরাজ্য ফেরত শতাধিক শ্রমিকের নাম তালিকায় নেই বলে অভিযোগ। পাশাপাশি পঞ্চায়েত সদস্যদের পরিজনদের তালিকায় নাম রয়েছে এমনও অভিযোগ ছুরছেন বঞ্চিত শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা একাধিকবার পঞ্চায়েতে গেলেও তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় এদিন। বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার মণ্ডল সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে পঞ্চায়েতে হাজির উপস্থিত হন শতাধিক শ্রমিক। কিন্তু তারা পৌঁছাতেই তৃণমূলের একদল কর্মী তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যাপক মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। ইট দিয়ে মেরে কাইয়ুমের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চায়েতের বাইরে।
লকডাউনের মধ্যে দিল্লি থেকে সপিরাবে ফিরে আনোয়ার আলি, আশাদুল হক, লাড্ডু আলি, রফিকুলরা কোয়ারান্টিন সেন্টারে ছিলেন।
সর্ব শ্রমিকদের বক্তব্য কুপন সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের তালিকায় নাম নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চায়েতের তরফে। অথচ যারা শ্রমিক নন বাড়িতেই কর্মযুক্ত তাদের নাম রেশন তালিকায় রয়েছে। আমরা কি অভিযোগটাও জানাতে পারব না পঞ্চায়েত কে। পঞ্চায়েত তো সর্ব সাধারনের জন্যই।
বিজেপির সংখ্যালঘু নেতা কাইয়ুম বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা সুষ্ঠভাবে পঞ্চায়েতের সামনে অবস্থানের জন্য গিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল কর্মীরা এসে আমাকে আমাদের মেরে তাড়িয়ে দেয়। হামলা চালিয়েছে তারা। এটা ঠিক নয়! গ্রামের মানুষ কোথায় যাবে?
ভগবানপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপ প্রধান সৈয়দ আরিফের বক্তব্য তালিকা তৌ উপর প্রশাসন করেছেন। কিন্তু বিজেপি এসে গন্ডোগোল বাঁধাতে শ্রমিকদের উদ্যত করছেন। ওরা ভাঙচুর করেছে পঞ্চায়েতে ঢুকে। শ্রমিকের সাথে রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়েও হামলা চালিয়েছে উপ প্রধানের দাবী।
বিজেপির জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর রাম বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা যাতে বঞ্চিত না হয়। কুপন যেন সব পরিযায়ী শ্রমিক পান সেই নালিশ নামা দিতেই তো গিয়েছিল শ্রমিকরা।
কিন্তু শ্রমিকদের উপর যেভাবে হামলা তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে পঞ্চায়েত গুন্ডা বাহিনী পুষতে শুরূ করেছে মনে হচ্ছে জানান মালদা জেলার বিজেপি কমিটির সিক্রেটারী দীপঙ্কর রাম। তিনি আরোও দাবী করে বলেন, ওদের পঞ্চায়েত ফটক থেকে মারধর করে ঠেলে ঠেল তাড়িয়ে দেওয়া হল। পঞ্চায়েতে কেউ প্রবেশ করতেই পারেনি। তাহলে ওরা ভাঙচুর চালাল কিভাবে? প্রশ্ন তৈরী করতে বাধ্য করাচ্ছে তৃণমুল বলেন দীপঙ্কর রাম।
তালিকা তো পঞ্চায়েত থেকে হয়না। উপর মহল পঞ্চায়েতে তালিকা পাঠাচ্ছেন। এখানে স্বজনপোষন বলতে কিছু নেই। বিজেপি গন্ডগোল পাকাতেই এসব করছে। তারা তো গন্ডোগোলের জন্যই শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পঞ্চায়েতে নিয়ে যান। বলে জানান চাঁচল-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তী।
তবে সব পরিযায়ী শ্রমিক রেশনের কূপন পাবে প্রশাসন জানাচ্ছে।