|
---|
হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প, এখনও মাটি নিয়েই স্বপ্ন দেখেন নন্দিতা, মহেশরা
মোহাম্মদ রিপন, নতুন গতি :- বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। দিন দিন কেমন যেন লাল মাটির আসবাবপত্র থেকে ছোটবেলার খেলার সঙ্গী খেলনা গুলো হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের অধ্যায় থেকে। এখন আর পথে ঘাটে দেখা মেলে না
“কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ির,
বোঝাই করা কলসি হাড়ির”
কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার মৃৎ শিল্পীরা। কলেজ যাওয়ার পথে হঠাৎ চোখে পড়ল মুরারই থানার বালিয়ারা, পলশা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। এলাকাটা ঘুরে দেখে যেটুকু বুঝতে পারলাম বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে এই মৃৎশিল্পটি। তারপরও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে অনেকেই। বীরভূম জেলার মুরারই থানার বালিয়ারা, পলশা ও রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকাতে মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। যা সহজেই যে কারোর মনকে পুলকিত করে। এক সময় এই গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল।দূরদূরান্তের মানুষ আসতো মাটির জিনিসপত্র কিনতে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্পসামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্পী নন্দিতা পন্ডিত জানান বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিস পত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের বস্তু। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর ,এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিলের আর চাহিদাও নেই ক্রেতাদের মধ্যে।সে কারণে অনেক পুরোনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মুরারই থানার মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। মাটির বিভিন্ন কারুকার্য দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের দিকে এগিয়ে যেতেই মহেশ পন্ডিত নামে একজন মৃৎশিল্পী এগিয়ে এসে আগ্রহের সহিত বলল বাড়ি নিয়ে যান মাটির জিনিসপত্র বাড়ির লোক অনেক খুশি হবে জানান, মহেশের সাথে কথা বলে যেটুকু জানতে পারলাম বাপ-দাদার কাছে শিখেছিল এই মাটির কাজ, সেই ঐতিহ্যকে আজও ধরে রেখেছে, আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে মৃৎশিল্পটি।
তাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। পর্যাপ্ত কয়লা বা কাঠ পেতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। যদিও বা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম আকাশছোঁয়া।