লকডাউন পরিস্থিতিতেও এক হাত-পা কাটা যুবককে উদ্ধার করে প্রশংসিত তামান্না

লকডাউন পরিস্থিতিতেও এক হাত-পা কাটা যুবককে উদ্ধার করে প্রশংসিত তামান্না

    মোহাঃ কামরুজ্জামান, কালিয়াচক, মালদা:- রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে রয়েছেন, এক হাত ও এক পা নেই। এই লকডাউনে সেই মানুষটির পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না কেউই। সকলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউ তাঁকে একটু আগলে তুলছেন না। অথচ সেইটুকু করাই তো স্বাভাবিক। আসলে এটুকু সামাজিক দায়িত্ববোধ কি আর তেমনভাবে দেখা যায়?

    মঙ্গলবার সকালে মালদার রথবাড়ি মোড়ে এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যার এক হাত ও এক পা নেই। সারা শরীরজুড়ে মাছি বসে আছে। মনে হচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকে খাওয়া দাওয়া করেননি। এরকম অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সেখানে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না। আসলে এগোতে চাইছেন না।

    এমন সময়ই ঘটনাটি চোখে পড়ে ‘নতুন আলো’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য তামান্না খানের। তাকে উদ্ধার করার তাঁর একার সম্ভব নয়, তাই খবর যায় তাদের সংগঠনের সদস্য ফারহাদ, ছোটন, রাহুল ও বাকি সদস্যদের কাছে। প্রথমত তামান্না ও ফারহাদেরা তাকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যান একটি ভালো পরিস্কার জায়গায়। সেইখানে প্রথমে তাকে শুকনো খাবার ও জল খাইয়ে তামান্না নিজের হাতে তার চুল কাটা শুরু করে, তারপর তাকে সাবান দিয়ে ভালো করে স্নান করান এবং সবশেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। প্রায় পুরো ঘটনাই তামান্না নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভ করেছেন এবং রীতিমতো সেটি ভাইরাল হয়ে চলেছে। সঙ্গে কমেন্ট বক্সে দোয়া ও আশীর্বাদের ঝড় বৃষ্টি চলছে। বেশ প্রশংসিত হয়েছেন তামান্না খান।

    হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে ছেলেটিকে বোঝালেন যে, তারা তার বন্ধু হতে চান। কিন্তু কথাবার্তায় অসংলগ্নতা, বলতে পারছেন না তাঁর নাম, বাড়ির ঠিকানা।
    অবশেষে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। প্রথমে তাকে ইমারজেন্সি বিভাগে ভর্তি করিয়ে ডাক্তারেরা তার চিকিৎসা করে এবং পরে তাঁকে জেনারেল বেডে দেওয়া হয়। আবার রাত্রি বেলা তামান্না নিজের হাতে তাকে রুটি সবজি খাইয়ে আসেন। শেষে ছেলেটি বুঝতে পেরেছেন যে এরা আমার শত্রু নয় এরা হয়তো আমাকে ভালবাসে আমার বন্ধু হতে চাই।

    তামান্নার কথায় “এর আগে প্রায় এক বছর হলো আমরা এই ভাইটিকে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম তখন হাত ও পা থেকে রক্ত পড়ছিল, আমরা তখন তাঁর চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তিও করিয়াছিলাম। কিন্তু কোনো ক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে এক বছর পর আজ আবার তাঁকে খুজে পেয়েছি এরকম একজন পঙ্গুকে স্নান করিয়ে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে, এইবার আমরা চাই সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে আমরা তাঁর বাড়ির পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারবো।”