প্রয়াত মেদিনীপুরের প্রাক্তন বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতা শোভানাথ বোস

নতুন গতি, নিউজ ডেস্ক:-
মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী আন্দোলনে অবসান হলো একটি যুগের।অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় বামপন্থী আন্দোলন বিকাশ ও সিপিআইএম পার্টি সংগঠন গড়ে তোলার অন্যতম নেতৃত্ব শোভানাথ বোসের জীবনাবসানে গোটা অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা রাজ্যের বামপন্থী মহলে শোকের ছায়া নেমেছে। সোমবার বেলা একটা আট মিনিটে প্রয়াত হন সিপিআইএম এর অন্যতম বর্ষীয়ান সদস্য শোভানাথ বোস।মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল চুরাশি বছর ছয় মাস। বার্ধক্য জনিত অসুখে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ জনিত কারনে তিনি প্রয়াত হন।দীর্ঘ অসুস্থতা স্বত্ত্বেও তিনি তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে কমিউনিস্টদের শ্রেনী সংগ্রাম, শ্রেনী চেতনা সহ অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার শ্রেনী আন্দোলনের বহু দলিলকে যেমন সমৃদ্ধ করে গেছেন, তেমনি অনেক গুলি বই লিখে গেছেন। তাঁর লেখা দুটি’ উল্লেখযোগ্য বই হলো ‘প্রাসঙ্গিকী’ এবং ‘একুশের আবহ”। শোভানাথ বোসের প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করেন সিপিআইএম এর রাজ্য সম্পাদক সূর্য কান্ত মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুন রায় এবং প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকার সহ পশ্চিম মেদিনীপুর ,পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার পার্টির নেতৃত্ব বৃন্দ। ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে ছাত্রজীবনেই বামপন্থী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন শোভানাথ বাবু। উত্তরবঙ্গে জন্ম। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কে চাকুরি সূত্রে মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরে অবস্থান করতেন । ১৯৭১ সালে সিপিআইএমের সদস্যপদ লাভ করেছিলেন। মেদিনীপুরে চাকুরি জীবনেই শ্রমিক কর্মচারী আন্দোলন বিশেষ করে ব্যাঙ্ক,বীমা সংগঠনের নেতৃত্ব হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার সেনগুপ্ত এর সান্নিধ্যে আসেন শ্রেনী আন্দোলনের পথ ধরেই। ১৯৮২ সালে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে পার্টির সর্বক্ষনের কর্মী হন। সেই সময় থেকে তিনি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিসাবে বহু দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। জেলা ভাগের পরও ২০০৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অসুস্থতা এবং বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি পার্টির সমস্ত পদ ছেড়ে পার্টি সদস্য হিসাবে আমৃত্যু পার্টির কাজে সহায়তা করে গেছেন বিভিন্ন ভাবে।

    জেলায় শ্রমিক সংগঠন, সমবায় আন্দোলনএবং ব্যাঙ্ক,বীমা কর্মচারী ও অাধিকারিক সংগঠন লালন পালন সহ নজরদারিতেও উল্লেখ যোগ্য অবদান রেখে গেছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সদস্য সহ ফিনান্স সাব কমিটর সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন।
    সদা হাস্যময় মুখ আর ছোটো থেকে বড়ো সবাইয়ের সাথে অমায়িক আচরন সহ বহু গুনের অধিকারী ছিলেন। বামপন্থী ছাত্র-যুবদের অভিভাবক সহ তাদের কমিউনিস্ট হিসাবে গড়ে তোলার নজর দিতেন জেলা সর্বত্র।
    প্রয়াত বোসের স্ত্রী পাঁচ বছর আগে প্রয়াত হন। তিন মেয়ের ২ জন প্রবাসে এবং একজন মেদিনীপুরে থাকেন। তাই খড়্গপুর শহর ছেড়ে গত সাত বছর মেদিনীপুর শহরে মীরবাজারে থাকতেন। সোমবার মীরবাজারের বাসভবনেই প্রয়াত হন। এদিন বিকালে তার দেহ মীরবাজারে পার্টির জেলা দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা লাল পতাকা ও মালা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান পার্টির জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বিজয় পাল, মেঘনাদ ভূঁইয়া, কীর্তি দেবক্সী, সত্যেন মাইতি সহ বহু পার্টি নেতৃত্ব সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব বৃন্দ। মাল্যদান করেন তার দুই জামাতা সহ কন্যারা। মেদিনীপুর পৌরসভার পদ্মাবতী শশ্মানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সোমবার সন্ধ্যায়।