বেতন বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি, গ্রেফতার ১০৫ জন শিক্ষক।

সাইফুদ্দিন মল্লিক, নতুন গতি : সর্বভারতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য প্রচলিত বেতনক্রম ( PRT স্কেল) চালুর দাবিতে সোমবার ও মঙ্গলবার শহিদ মিনারের সামনে দু’দিন ব্যাপী অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন রাজ্যের প্রায় হাজারদুয়েক প্রাথমিক শিক্ষক।

    সোমবার দুপুর থেকেই উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (UUPTWA) ডাকে এই বিক্ষোভে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তাঁদের মূল দাবি  সর্বভারতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ৯৩০০-৩৪৮০০ টাকা ও গ্রেড পে ৪২০০ টাকা। সেখানে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৫৪০০-২৫২০০ টাকা ও গ্রেড পে ২৬০০ টাকা। UUPTWA-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চন্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের মূলত একটাই দাবি। অবস্থান বিক্ষোভ থেকে বলা হয় বা দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এরাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে। শিক্ষকদের দাবি এন সি টি নির্দেশিকা মোতাবেক দশ হাজার কম মাইনে পাচ্ছি।

    প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হতো মাধ্যমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে বা মানদন্ডে। তাই মাধ্যমিক স্কেলে মাইনে পান প্রাইমারী শিক্ষকরা। বর্তমানে ২০১০ সালের এন সি টি ই – র নির্দেশিকা অনুযায়ী শিক্ষকতার যোগ্যতা মাধ্যমিক বাড়িয়ে উচ্চ –  মাধ্যমিক করা হয় এবং মেধার বিবেচ্য হিসাবে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বরের শর্ত যুক্ত করা হয়। সঙ্গে দুবছরের ডি এল এড কোর্সও বাধ্যতামূলক করা হয়। রাজ্যের ২০১০ সালের আগের নিযুক্ত শিক্ষকরা যোগ্যতা বৃদ্ধি ও এন সি টি – র নির্দেশিত টিচার্স ট্রেনিং কোর্সটি সম্পূর্ন করেন। ২০১০ সালের পরবর্তীতে নিযুক্ত শিক্ষকরা ( ২০১৪  ও ২০১৭ সালে নিযুক্ত ) কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা এন সি টি – র নিয়মের মধ্যেই নিযুক্ত। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকরা যোগ্যতার নিরিখে কম মাইনেতে কাজ করছেন। মূলত মাইনে বাড়ানোর দাবি নিয়ে এই আন্দোলন।

    গত সোমবার বিক্ষোভ স্থলে হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা খুব দুঃখের। শিক্ষকরা যখন পথে নেমে আসেন তখন বোঝা যায় সমাজ ভালোভাবে চলছে না। এটা একটা সামাজিক ব‍্যাধির প্রতিফলন। শিক্ষকদের দাবি অত‍্যন্ত সংগত।” তাঁর প্রশ্ন, “অন্য রাজ্যে যখন সর্বভারতীয় বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন দেওয়া হচ্ছে, তখন এরাজ্যের শিক্ষকরা তা পাবেন না কেন?”

    মঙ্গলবার শিক্ষক সংগঠনের ডাকে বিক্ষোভ মঞ্চে হাজির হন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি এবং বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকার ক্লাবকে টাকা দিচ্ছে, কার্নিভালে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রাপ্য টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। সভাতে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি প্রতিনিধিও।

     

    সোমবার রাতে তাঁদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনকী, তাঁদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তাঁর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে এদিন ( মঙ্গলবার ) বেলা ১২টা নাগাদ শহিদ মিনার ময়দান থেকে বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দেন সংগঠনের নেতৃত্ব। প্রায় হাজার শিক্ষক ডোরিনা ক্রসিংয়ে বসে পড়েন। অল্পক্ষণের মধ্যেই স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।প্রায় ২৫ মিনিট ডোরিনা ক্রসিং অবরুদ্ধ থাকার পর তাঁদের জোর করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে যায় পুলিশ। এরপরই শিক্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। আন্দোলনের নেতা শিক্ষক মইদুল ইসলামের অভিযোগ, ‘‘আন্দোলন ভাঙার জন্য পুলিশ আমাদের কয়েকজনকে মারধর করেছে। এমনকী, আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষিকার সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়েছে। রাস্তা মুক্ত করতে ১০৫ জন শিক্ষককে গ্রেফতার করে লালবাজার সেন্ট্রাল লক আপে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আন্দোলনকারীদের মধ্যে ১৫ জন শিক্ষিকা ছিলেন। ধৃতদের মুক্তির দাবিতে শহিদ মিনার ময়দানে অনশন শুরু করেন অন্য শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যথার্থ দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষকেরা। অপদার্থ সরকার তাঁদের গ্রেফতার করে সেন্ট্রাল লকআপে ভরেছিল। এত বিরাট সংখ্যক শিক্ষককে গারদে ঢোকানোর কোনও নজির এ রাজ্যে নেই।’’ পাঁচ ঘন্টা পর ছেড়ে দিয়া গ্রেফতারকৃত শিক্ষকদের।

    গতকাল সভাস্থল থেকে শেষ নির্দেশিকা দিয়া হয় , ” যদি সরকার পক্ষ থেকে বলা হয় পে কমিশনের আগেই আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, তাহলে ভালো। না হলে আমরা আমরণ অনশনের দিকে যাব। এই মঞ্চ ছেড়েও উঠব না। “