অসংখ্য ভক্তদের শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ইন্তেকাল করলেন বিশিষ্ট হেকিমী চিকিৎসক ও সমাজসেবী বামনগাছির ফকির সাহেব হুজুর

নিজস্ব প্রতিনিধি : বামন গাছির আলহাজ্ব শাহ সুফি ফকির সাহেব হুজুর ইন্তেকাল করলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অগণিত ভক্ত ও এলাকাবাসীকে শোকসাগরে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি মাত্র ৭৫ বছর বয়সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন । শনিবার রাত ন’টা নাগাদ তিনি হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন। চিকিৎসা শুরুর পরপরই তিনি ওই রাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রবিবার বেলা দু’টোয় বামনগাছি চৌমাথায় কয়েকহাজার মানুষ তার যানাজায় শরিক হন।বারাসতের ছোটজাগুলিয়ার শিকদেশপুকুরিয় গ্রামে তাঁর বাসভবনে এর সামনে নির্দিষ্ট কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি রেখে গেলেন তার দুই পুত্র এক কন্যা স্ত্রী ও অগণিত ভক্ত বৃন্দকে। তাঁর যানাযা পড়ান ফুরফুরা শরীফের ছোট হুজুর( রহ.) এর পুত্র পীরজাদা ইসমাইল সিদ্দিকী। ফকির সাহেব হুজুরের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা ও বিধায়ক হাজী নুরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য ডা. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, তার দীর্ঘ জীবনের ছায়াসঙ্গী রমেশচন্দ্র চক্রবর্তী, প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের রাজ্য সভাপতি সিয়ামত আলি, হিউম্যান রাইটস মিডিয়া সেলের রাজ্য সভাপতি ইমরান আলি শাহ, বিশিষ্ট আলেম আমিনুল আম্বিয়া, সমাজসেবী মাহফুজার রহমান , সমাজসেবী প্রকাশ সাহা, ফুরফুরা শরীফের খাদেম হাজী ইয়াকুব আলি প্রমুখ। এদিন মরহুমের পরিবারের সঙ্গে থেকে দাফন পর্যন্ত তদারকি করেন ও শেষ দোওয়া করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইমাম কো অর্ডিনেটর পানিগোবরা দরবার শরীফের পীরপৌত্র মাওলানা হাসানুজ্জামান। মরহুম ফকির সাহেব জন্মগ্রহণ করেন হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার ভগবানপুর গ্রামে। যৌবন বয়সেই তিনি বেরিয়ে পড়েন দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে। ফুরফুরা শরীফের ন’হুজুর পীরকেবলার এজাজত প্রাপ্ত হন ১৯৭১ সালে। তারপর তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দ্বীনি শিক্ষা প্রচার করেন এবং মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। হেকিমি চিকিৎসায়ও তিনি পারদর্শী হন। ১৯৮৪ সাল নাগাদ তিনি পাকাপাকিভাবে স্থায়ী নিবাস তৈরি করেন উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার ছোটজাগুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকদেশ পুকুরিয়া গ্রামে। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি মনে করতেন সব সম্প্রদায়ের মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই সম্প্রীতি রক্ষিত হয়। রিজিকের মালিক আল্লাহ। সুতরাং কেউ খাবে, কেউ খাবে না তা হবে না। দীন দঃুখী মানুষ মাত্রই তিনি নিজের বলে মনে করতেন। এই গ্রামটিতে তিনি দ্বীনি শিক্ষায় আরো উন্নত করে তুলতে প্রতিষ্ঠা করেন মাদ্রাসা দিদারে সিদ্দিকীয়া সোহরাবিয়া হিফজুল কোরআনিয়া । রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদের তিনি ছিলেন পৃষ্ঠপোষক। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত মানুষ এদিন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ফকির সাহেব হুজুরের বাসভবনে আসেন।