|
---|
সেখ রিয়াজুদ্দিন, বীরভূম: বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বীরভূম জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ অবস্থানে অংশ গ্রহণ করেন। সংগঠনের দাবি গ্রীষ্মের দাবদাহের অজুহাতে দেওয়া ৪৫ দিনের ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন অব্যাহত রাখার দাবিতে বিক্ষোভ অবস্থান করা হয়। জেলা শাসকের পাশাপাশি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে ও দাবিপত্র প্রদান করা হয়। “আর ছুটি নয়, আমরা স্কুলে পড়াতে চাই”- লেখা প্ল্যাকার্ড বুকে নিয়ে শিক্ষকগন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এদিন সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা ফরিদা ইয়াসমিন ছাড়াও বদি কিস্কু,নিতাই অঙ্কুর, মার্সাল হেমরম ,অমল মন্ডল প্রমুখ নেতৃত্ব।উক্ত আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেত্রী যুথিকা ধীবর।সভাপতিত্ব করেন বাঞ্ছারাম মাল।
উল্লেখ্য গত ২৭ শে এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দাবদাহের কারণে শিক্ষা দপ্তর ২মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৪৫ দিনের গ্রীষ্মের ছুটির নির্দেশিকা জারি করেছেন।
এই দীর্ঘ ছুটির প্রতিবাদ করে সমিতির পক্ষ থেকে গত ২৮ শে এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিবেরর নিকট তা পুণর্বিবেচনার দাবি জানান। গত ২ মে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। আগামী ১৯ শে মে তার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে খবর।
সংগঠনের পক্ষ থেকে এও জানান, এপ্রিল মাসে কয়েক দিন ধরে রাজ্যে তাপ প্রবাহ ছিল ঠিক, সে জন্য শিক্ষামন্ত্রী পর্যালোচনা বৈঠকও করেছিলেন এবং তাঁর আদেশ অনুযায়ী সর্বত্র সকালে স্কুল চালু হয়। তিনি সে সপ্তাহে পরবর্তী পর্যালোচনার ঘোষণা করেছিলেন। আরও বলা হয়েছিল ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে করোনায় দীর্ঘ ২ বছর স্কুল বন্ধ থাকার জন্য পড়াশোনায় ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এসব বিবেচনা না করেই হঠাৎ করে দীর্ঘ ছুটির ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা মে মাসের ১ম সপ্তাহে আবহাওয়া পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং বর্তমানে কয়েক দিনের ঝড়বৃষ্টিতে তা প্রমাণিতও হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা তখন এতটাই কম ছিল যে শিশুদের সোয়েটার পরে স্কুল আসতেও দেখা গিয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ দিন কখনও এধরনের দাবদাহ থাকে না। উল্লেখ্য যে, পার্শ্ববর্তী উড়িষ্যা সরকার এহেন পরিস্থিতিতেও শিক্ষার স্বার্থে ৫০দিনের ছুটি বাতিল করে মাত্র ১০ দিনের ছুটি দিয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য সারা বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। স্কুল বন্ধ রাখা তার তো সমাধান হতে পারে না।
এমনিতেই করোনার জন্য দীর্ঘ ২ বছর বন্ধ থাকায় বহু ছাত্র ছাত্রী অক্ষর জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে বলে সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাত্র আড়াই মাস পড়াশোনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ১ম পর্বের মূল্যায়নের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ। এরকম সময়ে দীর্ঘ ছুটি দেওয়ায় শিশুদের মধ্যে যতটুকু পড়াশোনার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
অন্যদিকে উদ্বিগ্ন বহু শিক্ষক ১ম পর্বের মূল্যায়ন গ্রহণ করে নিয়েছেন। এজন্য পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া সহ জেলায় জেলায় শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে। যা সরকারের চূড়ান্ত শিক্ষার স্বাধিকার হরণকারী পদক্ষেপ।
এক প্রেস বিবৃতিতে সমিতির জেলা সম্পাদিকা ফরিদা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন শিক্ষার মানের অবনমনের দায় সবসময় শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় অথচ কোন স্তরেই তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। এমনকি দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর পর্যালোচনাও এরাজ্যে মুল্যহীন।
তাঁর আরো অভিযোগ শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথ মসৃণ করবার জন্যই সরকার বার বার ছুটি দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি শিক্ষার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করতে চাইছে।
সভায় শিক্ষা ধ্বংসকারী এই দীর্ঘ ছুটি বাতিল করে স্কুল চালু করার দাবি ওঠে। সেই সঙ্গে তিনি শিক্ষক সমাজের কাছে ছাত্রদের স্বার্থে স্কুলে স্কুলে পঠন-পাঠন চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানান।