দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে সহিংসতায় উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জামাআতে ইসলামী হিন্দ সহ একাধিক গণসংগঠন ও নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ মিছিল

কলকাতা: জামাআতে ইসলামী হিন্দ সহ একাধিক গণসংগঠন ও নাগরিক সমাজের ডাকে আজকে কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদ থেকে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে উচ্ছেদের নামে রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিবাদী মিছিলে হাজার হাজার মানুষ যোগদান করে।
দিল্লীর জাহাঙ্গীরপুরিতে বুলডোজার দিয়ে সাধারন মানুষের বাড়ি-ঘর ভেঙে ফেলার বেআইনি অভিযান চলছে। যে কথিত অভিযোগ নিয়ে এসে এই পুলিশি সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে তা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সামিল। এই বেআইনি কাজে বৈধতা দেওয়ার জন্য দুটি অজুহাত পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন নিয়ে এসেছে যার একটি হলো এই অধিবাসীরা নাকি দাঙ্গা বা সহিংসতায় মদদ দিয়েছে। দ্বিতীয়ত: বলা হচ্ছে অবৈধ নির্মাণ করে এরা বসতি নির্মাণ করেছে।

    অথচ জাহাঙ্গীরপুরীতে যা কিছু ঘটেছে এবং যেভাবে সহিংসতা ঘটেছে তা স্পষ্টভাবে আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে ও পরিকল্পিত ভাবে এটা সংগঠিত করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশকে নষ্ট করতে ঘটনার দিন সহিংসতার প্রথমে দুবার মিছিল বের করা হয়েছিল। ইফতার ও নামাজের সময়ে তৃতীয়বার মিছিল বের করার সময় হঠাৎ কয়েকজন লোক ঢোল বাজিয়ে জোরে জোরে গান বাজিয়ে বেরিয়ে আসে। মিছিলে থাকা লোকজন নানাভাবে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে প্রথম আগ্রাসন ও বিশৃঙ্খলা শুরু করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্রে সজ্জিত ছিল, মিছিলের সময় প্রকাশ্য ভাবে তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মারফত জানা যায় মিছিলের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হয়নি এলাকায়। পুলিশের ভূমিকা ও ন্যক্কারজনক ছিল। পুলিশ একতরফাভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরবর্তীতে পরিবেশকে আরো সহিংস করে তোলে। এটা দিনের আলোর মত স্পষ্ট যে, সহিংসতা বা দাঙ্গার পরিবেশ তৈরিতে একটি গোষ্ঠী উস্কানি দিয়েছিল। শোভাযাত্রা বের করে উস্কানি সৃষ্টি করে সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছিল? যারা প্ররোচনা করেছিল তারা কি নির্দোষ ছিল? রমযানের সময়ে মসজিদের সামনে নাচানাচি, গানবাজনা করা, অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি বা গালি গালাজ করা, আপত্তিকর টন – টিটকিরি, মসজিদের গেটে এবং মিনারে ঝান্ডা লাগানো ইত্যাদি করে উস্কানি দেওয়া হয় যেটা আমরা সবাই ভিডিওতে দেখেছি তার জন্য প্রকৃত অর্থে দায়ী কে? এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা কতোটা সদর্থক ছিল?দ্বিতীয়ত যদি অবৈধ নির্মাণ কারণ দেখিয়ে বুলডোজার দিয়ে এই অভিযান চালানো হয় তাহলে এর সম্পর্ক দাঙ্গার বা সহিংসতার কি সম্পর্ক? এটা আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী নোটিস আসবে, নোটিশে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে এবং সর্বোপরি তারা যদি গরীব বা ঘরহীন শ্রেণীর হয় তাহলে সরকারকে তাদের অন্য জায়গায় বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিবে। এই সমস্ত গুলি না করে সরাসরি খুবই কম সময়ে বা হঠাৎ করেই অমানবিক ভাবে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর উদ্দেশ্য কি? এমনকি আদালতের রায়ের পরেও জোর করে এই প্রক্রিয়া চালু রাখা হয় যা সংবিধান বিরোধী ও আদালত অবমাননার সামিল। এই তৎপরতা ও ঘটনায় খুবই স্পষ্ট যে, সরকার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য সুতরাং সংখ্যাগুরুদের জন্যই পদক্ষেপ নেবে সেক্ষেত্রে কোথায় অন্যায় হলো বা কোথায় মানবতার হত্যা হলো এইগুলি দেখার বিষয়ই নেই। শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে শায়েস্তা করা সম্ভব হলো কিনা সেটাই দেখবে। সরকার যে অযোগ্য তারা দারিদ্র্যতা বিমোচন করতে পারেনি, তারা যে অসফল সেটা তারা গা জোয়ারি ভাবে অস্বীকার করছে। যারা ছোট ছোট গুমটি দোকান দিয়ে ঘর ও সংসার চালায়, যারা নিরুপায় হয়ে রুজি রুটির তালাশে এই ভাবে বসতি স্থাপন করে কোন মতে মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদের সমস্যা সমাধানের দায়-দায়িত্ব এদেশের সরকার গ্রহণ করবে না। সেটা রাজ্য সরকার হতে পারে বা কেন্দ্রীয় সরকার হতে পারে। এই ভেঙ্গে ফেলার পদক্ষেপে সরকারের যে কোন দারিদ্র্য বিমোচন করার কোনো প্ল্যান প্রোগ্রাম নেই তা স্পষ্ট এবং তারা যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছাড়া কিছু বোঝেনা তাও স্পষ্ট।

    তাই আজকে এই মিছিল ও সমাবেশ থেকে স্পষ্ট দাবি করা হচ্ছে যে

    ১) সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী জাহাঙ্গীরপুরি এলাকায় স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে হবে। বেআইনি উচ্ছেদের নামে ঘরবাড়িকে বুলডোজার দিয়ে অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করার যে কার্যকলাপ দিল্লির পুলিশ প্রশাসন শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

    ২) অনতিবিলম্বে শোভাযাত্রার সময়ে উস্কানিমূলক স্লোগানদাতাদের এবং সহিংসতায় উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।

    ৩) নিরীহ ও সাধারণ মানুষের যে সমস্ত বাড়ি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং দোকানপাট ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসন সরকারকে প্রদান করতে হবে।

    ৪) পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, উদাসীনতা ও যোগসাজশের মাধ্যমে এই নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে দোষীদের পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

    ৫) পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে সম্প্রদায়িক মনোভাব পরিবর্তন করে সকল সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে হবে। এই প্রতিবাদী মিছিল থেকে এই ধরনের জঘন্য কাজ থেকে ফিরে জন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।