রবীন্দ্রসদনে পরিবেশিত হল ‘ঋতুসংহারম

রামিজ আহামেদ : প্রকৃতির বর্ণময় রূপ মানব জীবনকে করে তোলে বর্ণময়। ছয় ঋতুর লীলা খেলায় রাঙিয়ে দেয় নতুন রঙে, জীবনে এনে দেয় নব নব রূপ ও রসের অপরূপ ছন্দ। প্রত্যেক ঋত্তু বৈশিষ্টে স্বতন্ত্র ও সমুজ্জ্বল।প্রকৃতির এই জনমোহিনী রূপে আকৃষ্ট হয়ে কবিগুরুর কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছিল-‘জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে-তুমি বিচিত্ররুপিনী’ (ঠিক তেমনি ছয় ঋতুর পালাবদল আধারিত ঋতু সংহার সংস্কৃত কবি কালিদাস রচিত একটি আদি রসাত্মক কাব্য। ছয়টি ঋতুর মালা যেন বিনি সুতোয় গাঁথা, চক্রাকারে অবর্তিত হতে থাকে। এক ঋতু বিদায় নেয়, আসে অন্য ঋতু। নতুন ঋতুর ছোঁয়ায় প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন রূপে। মহাকবি কালিদাসের এই অমর সৃষ্টিকে আধার করে সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে সৃজন ছন্দের শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করে ‘ঋতুসংহারম’। ভাবনা ও নৃত্য পরিচলনায় ছিলেন সৃজন ছন্দের কর্ণধার শ্রী রাজীব ভট্টাচার্য। ঋতু চক্রের শুরুতে ধুলায় ধূসর রুক্ষ, পিঙ্গল জটাজাল নিয়ে আবির্ভাব ঘটে গ্রীষ্মের, গ্রীষ্মের বিদায়ে আসে বর্ষা, যা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দেয় মায়ার কাজাল। শিউলি আর কাশফুলের সমারোহে বন্দিত হ্ন শারদলক্ষী। চালচিত্র তথা মাঙ্গলিক সাজ সরঞ্জামের শুনিপুন ব্যবহারে নৃত্যাংশটির দৃশ্যায়ন করেন রাজীব। হেমন্ত হাজির হয় পাকা ফসলের ডালি নিয়ে। দীপালিকার আলোয় ভেসে আসে শীত ও সবশেষে ঋতুরাজ বসন্ত। কালিদাসের ঋতু বর্ণনার একটি বৈশিষ্ট্য হল ঋতুগুলি দুই প্রণয়ী যুগলের সম্পর্কের আলোকে বর্ণিত।যা রাজীব তার নৃত্যবিন্যাসের মধ্যে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তমাল ও তিয়াসার দ্বৈত নৃত্যে। ওড়িশি নৃত্য আধারিত সমগ্র উপস্থাপনায় রাজীবের সুললিত ভঙ্গিমা ও অন্যান্য শিল্পীদের নিখুঁত পদকর্মে দীর্ঘ অনুশীলনের ছাপ বিদ্যমান। সৌমেন চক্রবর্তীর আলোকসম্পাত, সায়ক মিত্র ও মদনমোহন কুমারের দৃপ্ত কন্ঠস্বর, সুমন সরকারের সংগীত রচনা, শ্যামল সরকারের মঞ্চ সজ্জা বিশেষ প্রশ্ংশার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে মঞ্চে বিশিষ্ট নৃত্যগুরু কলাবতী দেবীর উজ্বল উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানের সুন্দর ভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন উর্মিলা ভৌমিক।