ধৈর্যচ্যুত ঘটেনি, ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি আপনাদের জন্য, মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ‘নেত্রী’ সম্বোধন করে তৃণমূল পরিবারেই থাকার বার্তা রাজীব ব্যানার্জীর

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ‘‌নেত্রী’ সম্বোধন করে তৃণমূল পরিবারেই থাকার বার্তা রাজীব ব্যানার্জীর। বহুদিন ধরেই ক্ষোভের কথা ব্যক্ত করার চেষ্টা করছিলেন বনমন্ত্রী। মাঝে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও এদিনের ফেসবুক লাইভে রাজীব ব্যানার্জি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এখনও অসন্তুষ্ট!‌ তবে মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ‘‌নেত্রী’ সম্বোধন করেছেন তিনি। নানা কারণেই নিজের বেসুরো মন্তব্যের জন্য খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। কথা দিয়েছিলেন, সেই মতোই দুপুর ঠিক ৩ টের সময় ফেসবুক লাইভে এলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। লাইভে তাঁর কথার সারমর্ম এটাই যে, দলে থেকে তাঁকে যদি কাজ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পিছনে ফিরে আর তাকাবেন না। তবে তিনি এও জানান যে, তিনি এখনও ধৈর্যচ্যুত হননি, তিনি এখনও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। অর্থাৎ, রাজীব যে এখনই দল ছাড়ার মতো বড় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, তা তাঁর আজকের ফেসবুক লাইভ থেকে বেশ স্পষ্ট।

    কিছুটা অভিমানের সুরে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, ‘‌আমি কোনওদিন মানুষকে ঠকাবো না। নিজের কেন্দ্রের মানুষের পাশে সব সময়ে দাঁড়িয়েছি। দলনেত্রীর আদর্শ মেনে কাজ করেছি। কখনও কখনও বাধা এসেছে, তা নিয়ে কথাও বলেছি। কিন্তু কেউ কেউ বিষয়গুলো অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি কিছু বললে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কাজ না হওয়া নিয়ে কোনও কথা বলছে না কেউ। যেটুকু বলা হবে, যদি সেটুকুই করতে হয়, তাহলে তো স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই।

    মমতা ব্যানার্জিও দলের কর্মীদের সম্মানের কথা বলেন। যখন দেখা যায়, কর্মীদের সম্মান দেওয়া হয় না, তখন কিছু বললে অন্যায় ? আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পছন্দ করি না। পদের মোহ নেই। শুধু মানুষের জন্যেই কাজ করে যেতে চাই। স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‌এই যুবসমাজ একজনকে চাইছে, যিনি পথ দেখাতে পারবেন। খারাপ লাগে, যুব ভাইবোনেরা চাকরি পাচ্ছেন না। কিন্তু লক্ষ্য যদি দেখানো যায়, তাহলে অনেকে সফল হয়। বিজেপিতে আসার ব্যাপারে একে রাজীব, দু’নম্বরে শতাব্দী রায়, তিন নম্বরে অপরূপা পোদ্দার”লিস্ট ধরালেন সৌমিত্রঅদ্ভুত বিচার! দেবী সরস্বতীর মূর্তি শোষণ মানসিকতার প্রতীক, প্রতিবাদে পুরস্কার নেবেন না বলে জানালেন সাহিত্যিকভারতীয় সেনার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে শুরু করোনার মহৌষধি দান! অভিযান আরম্ভ পূর্ব লাদাখ থেকেআজ‌ই কি তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গ ত্যাগ বিদ্রোহী রাজীবের? বিকেলে তাঁর ফেসবুক লাইভ নিয়ে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। ক‌ইয়ের ঝাঁক-এর মতো তৃণমূলীদের দলবদলের জেরে বাংলায় সঙ্কটে বিজেপির ভাবমূর্তি! অবস্থান স্পষ্ট করলেন দিলীপকোনও গুরুত্বই নেই প্রধানমন্ত্রীর কথার, টিকাপ্রাপকের তালিকার শীর্ষে তৃণমূল বিধায়কের নাম লাইভে এসে তিনি প্রথমেই সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। তিনি জানান যে আজ থেকে দেশজুড়ে গণটিকাকরণ শুরু হয়েছে। সেই কাজে যাতে সাফল্য আসে, তিনি সেই কামনাই করেন। এদিন তাঁর লাইভ দেখেছেন প্রায় ৬৭,০০০ হাজার মানুষ। সেখানে কমেন্ট পড়েছে ৯ হাজার।

    এদিন লাইভে এসে যে কথাটি সবথেকে প্রথমে তিনি তুলে ধরেন, তা হল যুব সমাজকে নিয়ে। তাঁর কথায়, যুব সমাজকে নতুন পথের দিশা দেখাতে হবে। সঠিক নেতৃত্বদানের অভাবে যুবসমাজ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে। তারা এমন একজনকে চাইছে, যে তাদের সঠিক পথ দেখাতে পারবে। এরপরই আক্ষেপ করে রাজীব বলেন, তিনি যখন দেখেন রাজ্যের যুবকেরা চাকরির অভাবে অন্য রাজ্যে বা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, তাঁর খুব দুঃখ হয়। তাঁর ক্তহ্য এই রাজ্যে যা মেধা ও সম্পদ রয়েছে, তা আর কোথাও নেই। তাই যুবসমাজের উন্নতিসাধনে তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। আইটি সেক্টরের জন্য কিছু ভালো চিন্তাভাবনা করতে হবে। কাজের পরিবেশ তৈরি হলে তবেই বেকার যুবক যুবতীদের স্বপ্নপূরণ হবে। এরপর দলের কর্মীদের জন্য তিনি বলেন যে কর্মীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। কর্মীদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে বলে রাজীবের অভিযোগ। তাঁর দাবী, কেউ যেন দলের কর্মীদের শ্রমিক না মনে করে। তারা একটু সম্মান চায়। রাজীবের কথায়, “আমি যেখানে গিয়েছি কর্মীদের সম্মান করেছি। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি। আমার দলনেত্রীও সেই কথাই বলেন, কিন্তু কোনও জায়গায় কর্মীরা যদি সম্মান না পান, সেটা নিয়ে বলা আমার অন্যায় ?

    এরপর দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাজীব বলেন যে, “যখনই কোনও ভালো কাজ করতে গেছি, বাধা পেয়েছি। কাজ না করতে পেড়ে দুঃখ পেয়েছি। সেখান থেকেই ক্ষোভ জন্মেছে। সেটা কার সঙ্গে ভাগ করব? আমি যদি কোনও কাজ করতে গিয়ে বাধা পাই, তাহলে সেটা নিয়ে মুখ খোলা কী অন্যায়? নিশ্চয় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুর তোলাও অন্যায় নয়। কিছু মানুষ ভুল বোঝাচ্ছেন। আমায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ডাকলে খারাপভাবে কথা বলে। তখন কেউ কিছু বলে না। আমার কী করার থাকতে পারে ? রাজীবের কথা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজীব এটাই বলতে চেয়েছেন যে, তিনি এখনই দল ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না। একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি ধৈর্য ধরে আছি। ধৈর্যের পরীক্ষার দিচ্ছি আপনাদের জন্য”। এতে করে গত কয়েকমাস ধরে তাঁকে নিয়ে যে গুঞ্জন উঠেছিল যে তিনি দল ছেড়ে দেবেন বা বিজেপিতে যোগ দেবেন, তা অনেকাংশেই পরিষ্কার হয়ে গেল। তবে শেষে রাজীব এই ইঙ্গিতও দেন যে, মানুষের জন্য কাজ করতে না পারলে, তিনি অন্য পথে হাঁটতে দু’বারও ভাববেন না।