“রমজান” আরবি মাস সমুহের মধ্যে সবথেকে উত্তম বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস

বাবলু হাসান লস্কর : রমজান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম । হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে,তাই এই মাসে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করা।

    রমজান মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে শয়তানকে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়,এবং মানুষের হৃদয়ে ভালো কাজ করার প্রেরণা জাগ্রত হয়। আমার উম্মতকে রমজান মাসে পাঁচটি জিনিস বিশেষভাবে দান করা হয়েছে, যা আগের (কোনো নবির) উম্মতকে দেয়া হয়নি। তাহলো-১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের থেকে বেশি প্রিয় ২. ফেরেশতারা তাদের (রোজাদারের) জন্য ইফতার পর্যন্ত ক্ষমার দোয়া করতে থাকে ৩. তাদের (রোজাদারের) জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সাজানো হয়। এরপর আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- অতিসত্বরই আমার নেক বান্দারা কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্ত হয়ে তোমার কাছে আসবে ৪. রমজান মাসে দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। যার কারণে অন্যান্য মাসের মতো এই মাসে খারাপ কাজ সংঘঠিত হয় না ৫. রমজানের সর্বশেষ রাতে রোজাদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল,সেই রাত কি লাইলাতুল কদর,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘না’, বরং নিয়ম হলো- কাজ শেষ হলে মজদুরকে তার মজুরি দেয়া।বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব ও প্রতিদান অপরিসীম। রোজার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত :  ১৮৫)

    হাজারো মাসের চেয়ে উত্তম রাত : রমজান মাসে । মানবতার দিশারি হিসেবে কোরআন নাজিল হওয়ায় মাসটির গুরুত্ব বহু গুণে বেড়ে গেছে। এই মাসে যে কদরের রজনী আছে, সেই রাতকে আল্লাহ তাআলা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেন। রোজার উদ্দেশ্য তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন। এ প্রসঙ্গে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

    পূর্ববর্তীদের রোজা : এই আয়াতে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, রোজা শুধু সর্বশেষ উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়নি। অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপরও রোজা পালন করার বিধান ছিল। পৃথিবীর প্রথম নবী আদম (আ.) রোজা পালন করতেন। নুহ (আ.)-এর সময় প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখার বিধান চালু ছিল। দাউদ (আ.) তাঁর শিশুপুত্রের অসুস্থতার সময় সাত দিন রোজা পালন করেন। মুসা (আ.) এবং ঈসা (আ.) ৪০ দিন করে রোজা রেখেছেন। আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সা.) রোজা ফরজ হওয়ার আগে মহররমের নবম ও দশম তারিখ রোজা রাখতেন। হিজরি দ্বিতীয় সালে রমজানের রোজা ফরজ হিসেবে ঘোষিত হয়।

    তাহলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, মাহে রমজানের রোজা পালন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেউ কোনো কারণ ছাড়া রোজা না রাখলে সে ‘ফাসিক’ বলে গণ্য হবে। আর রোজা অস্বীকার করলে সে কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে।

    রমজানে গুনাহ মাফ : মাহে রমজানের মাস তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম ১০ দিন রহমত, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের সময়। রমজান মাসে আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য অশেষ রহমত ও করুণা লাভের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেন। অতীতের সব গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আসে রমজান মাসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। রমজানের রাতে নামাজ আদায় করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করেন।।