|
---|
বাবলু হাসান লস্কর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : কুলতলির জামতলা বাজারে প্রতি বছরের ন্যায় অনুষ্ঠিত হলো রাধা-কৃষ্ণের দোল উৎসব। নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ উৎসব,এখানে এই উৎসবকে ঘিরে নির্মিত হয় চমৎকার সব মূর্তি। অপরূপ কারুকার্যময় নির্মাণশৈলী এবং বিচিত্র রূপকল্পে নানান শক্তিরূপের নির্মিত মূর্তিকে পূজা করার মধ্য দিয়েই এই উৎসব নবদ্বীপে পালিত হয়। এছাড়া নবদ্বীপের কোথাও কোথাও অনাড়ম্বরভাবে চক্র-রাসও পালিত হয়। এটি মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় উৎসব। কথিত আছে, আঠারো শতকের দিকে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র বাংলাদেশে এই উৎসবের প্রথম প্রচলন করেন। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডপে প্রতি বছর এই উৎসব বিরাট কলেবরে পালিত হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে এই উৎসবে। এইদিন কৃষ্ণের বিগ্রহকে ঘিরে কুমারী মেয়েরা নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। ১৭৭৯ খ্রীস্টাব্দের দিকে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নৃত্যগীতের সমন্বয়ে এই উৎসবের প্রচলন ঘটান মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র। ভাগ্যচন্দ্রের মৃত্যুর পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে রাসনৃত্যকে আচৌকা, বৃন্দাবন, খুড়ুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন ইত্যাদি ভঙ্গিমায় মণিপুরিদের মাঝে রাসনৃত্য ছড়িয়ে দেন।
রাসলীলা উৎসব শুরু হয় মূলত গোষ্ঠলীলা থেকে। গোষ্ঠলীলায় ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেরা গোপালের মতন রাখাল সেজে গোষ্ঠনৃত্য করে এবং গরু চড়াতে যায়। পাশাপাশি চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। মণিপুরি সমাজে রাসনৃত্য ছয় ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো মহারাস, নিত্যরাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদুখলরাস। এবং সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উপলক্ষে ভক্তদের জন্য তীর্থ-স্নানের আয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতের বাঙালি অধ্যুসিত বিভিন্ন অঞ্চলে এই রাস-উৎসব পালন করা হয়।
রাধাকৃষ্ণ হচ্ছে সেই নাম যাঁদের সাথে অমর প্রেমকাহিনী জড়িয়ে আছে। তখনও রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমকাহিনী মানুষের কাছে পৌঁছায় নাই। আর সেই মধ্যযুগ থেকেই এই প্রেমকাহিনী বাঙলার মানুষের হৃদয়ের গল্প হয়ে আছে। আমাদের বাংলাসাহিত্যের মধ্যযুগের কবিগণ রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে তাদের শৈল্পিক ভাষা আর ছন্দে করে তুলেছেন অমর। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কুলতলির জামতলায় দেখা মিলল ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারী দীর্ঘক্ষন এই নাম সংকীর্তন শুনতে হাজির হয়েছেন। দূর-দূরান্ত থেকে যেখানে খ্যাতনামা শিল্পীরা নাম সংকীর্তন করছেন। আর এই রাধাকৃষ্ণের মধুর বাণী শোনার অপেক্ষায় মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো।