|
---|
উজির আলী, নতুন গতি, চাঁচল: লকডাউন থেকে নন, প্রায় পাঁচবছর ধরে কর্মহীন। বর্তমানে পেরালাইসিস হয়ে বাড়ীতে শয্যাযায়ী ওই পৌঢ়। তবে হাটতে-চলতে গেলে একহাত লাঠি আর স্ত্রীর কাঁধই একমাত্র সম্বল। সন্তান হীন দাম্পত্য জীবনে গোলাম মোস্তফার আক্ষেপ ছেলে থাকলে হয়তো তাদের উপার্জনেই চলত অন্তিম সময় টুকু। এই দুর্দশার ছবি মালদহের চাঁচল ১ নং ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিলাইডাঙী গ্রামের।
সন্তানহীন স্ত্রী মনসূরা বিবি জানান, স্বামী পাঁচ বছর ধরে শয্যাসায়ী। অর্থাভাবে গ্রামেই কোয়াক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। পূর্বে ভিনরাজ্যে নির্মানকর্মীর কাজে যুক্ত ছিলেন। কোনো মতেই চলত সংসার। চাষের জমিও নেই,নেই কোনো উপার্জন কারী। মরসুম অনুযায়ী বিত্তবানদের জমিতে ফসল কেটেই চলে সর্ব বৎসরের আহার জোগান। এছাড়াও ১০০ দিনের কাজ করে কিছু আয় হলে তা স্বামীর চিকিৎসাতেই ফুরিয়ে যায়। কখনও আবার পরিচারিকার কাজও করতে হয়। তবে তা এখন আর হয়না। ভাইরাসের আতঙ্কে তা স্থগিত রেখেছেন বাড়ীর মালিকেরা।
তবে গ্রামবাসীরা স্বইচ্ছায় সাহায্য করলে তা হাত পেতে নিতে হয় তাদের। কারন অভাবের সংসার। এভাবেই জীবন সংগ্রাম করে অসুস্থ বৃদ্ধ স্বামীর সেবা করেছেন ওই ৩৫ বছরের বধূ মনসুরা বিবি। মনসূরার বাপের বাড়ী ওই জিপি এলাকার সাবাজপুরে। বাপের পরিবারেরও অবস্থা অস্বচ্ছল।
তাদের দুর্দশার কথা বাসিন্দা বেলাল আলী জানান, এই পরিবারটির শোচনীয় অবস্থা। মেয়ে মানুষের উপার্জনে সংসার চলে। গ্রামবাসীও সাহায্য করে। তবে প্রশাসন এদের দিকে নজর দিলে হয়তো পরবর্তী জীবনটা সুখেই কাটবে তাদের। একে কোনো সন্তান নেই তাদের।
এক মাস আগে আমফানে মাটির বাড়িটিও ভেঙে পড়েছে। টালির ছাউনির ভাঙা ঘরের এককোনেই তাদের বর্তমানে আশ্রয়। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তিরপাল বা কোনো আশ্বাসও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে বলেন গোলাম মোস্তফা। অভিযোগ পঞ্চায়েতের তরফে মেলেনি কোনো সাহায্য বা আশ্বাস। এবিষয়ে খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পারভিন খাতুন বলেন,ব্লক থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে তিরপাল পাওয়া যায়নি। তবে পাকা ঘর ও ভাতা নিয়ে ভাবা হবে।
এমতাবস্থায় দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত হচ্ছে ওই দম্পতির। সন্তান নেই! পরবর্তী জীবন কিভাবে কাটবে? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মধ্যে। অসুস্থ মোস্তফা বাবু জানান, রেশনে চাল মিলছে। তবে তরকারির টাকা জোটেনা। কখনও কখনও সাদা ভাত লবন দিয়ে ভোজন করতে হয়। তার মধ্যে আশ্রয় টুকুও বেহাল। বর্তমানে বর্ষাকাল। দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে উদ্বেগ আরোও বাড়তে থাকে।
অবিলম্বে পাকা ঘর ও বার্ধক্য ভাতা প্রদানের জন্য দৃষ্টি প্রশাসনের আকর্ষন করেছেন ওই অসহায় দম্পতি।
এবিষয়ে চাঁচল ১ নং ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য বিষয়টি জানতে পারলে তিনি জানান, ওই পরিবারের তরফে একটি লিখিত আবেদন জমা পড়লেই তাদের অভাব দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ব্লক প্রশাসন পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
কবে মিটবে অভাব? সেই অপেক্ষায় অসহায় দম্পতি প্রতিদিন মুখ চেয়ে বসে থাকে গৃহদ্বারে।