ধর্মীয় পোষাক বা পরিচয় পেশার পথে অন্তরায় হতে পারে না। এটা সংবিধান বিরোধী: ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা

সাকিব হাসান, বারুইপুর: বিদেশী ইংরেজদের দাসত্ব থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতবাসী অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বহুমুখী ত্যাগ স্বীকার করেন। জীবন উৎসর্গ করেছেন সকল ধর্মের মানুষ। স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পোষাক বা পরিচয় অন্তরায় হয়নি। অনেক ভারতীয় দেশের সাথে গাদ্দারী করে বৃটিশের সঙ্গ দিয়েছে, যেটা সকলেই জানে। পূর্বপুরুষের বহুমুখী ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া সদ্য স্বাধীন ভারতের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের বেদনা সকলেই সমান ভাবে সহ্য করেছে এবং দেশের উন্নতির কাজে অংশ গ্ৰহণ করেছে। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় দেশ এই পর্যন্ত এসেছে। এ পি জে আবুল কালামের অবদানে দেশ শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই দীর্ঘ ত্যাগের যাত্রা পথে ধর্ম বা ধর্মীয় আচরণ কোনদিন অন্তরায় হয়নি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৪ বছর পর ধর্মীয় কারণে মুসলিম সম্প্রদায়কে সেবার মাধ্যমে রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে আনা ভারতের স্বাধীনতাকে ভোগ করা থেকে সুকৌশলে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এই অমানবিক পরিকল্পিত বঞ্চনার সাম্প্রতিক উদাহরণ হল হিজাব বা মাথা ঢাকার কারণে মুসলিম যুবতীদের কনস্টেবল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, যেটা খুবই লজ্জাজনক, অমানবিক ও অসংবিধানিক। এটা আবার হয়েছে সম্প্রীতির পশচিমবঙ্গে।

     

    বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম যুবতীদের বঞ্চিত হওয়ার আর্তনাদ। ২৬ সেপ্টেম্বর তাদের পরীক্ষা। সেই হিসাবে চাকরী প্রার্থীরা পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে। তাদের অনলাইন আবেদন সফলভাবে জমা নেওয়া হয়েছে। তাদের ফি জমা হয়েছে। আর্থিক সংকটের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তারা সমস্ত নিয়ম মেনেই আবেদন করেছে। দারিদ্রতার ভিত্তিতে নয়, মেধার ভিত্তিতে চাকরী করতে চায়। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়, পরীক্ষায় পাশ করে চাকরী করতে চায়। এই মনবলকে সম্বল করে তারা প্রস্তুতি শুরু করে। অনেক ব্যয় ও পরিশ্রম করতে থাকে। অবশেষে পরীক্ষা দেওয়ার সময় নিকটে চলে আসে। তাদের মনে আশা বাঁধতে থাকে যে, পূর্বপুরুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন ভারতের সেবা করে দারিদ্র পিষ্ট জীবনকে একটু সুখের করবে। দেশকে করবে আরো সমৃদ্ধ।

    দারিদ্রতার কষ্ট, বুক ভরা আশা, চাকরীর জন্য ব্যয় ও পরিশ্রম ইত্যাদির সাথে তারা হঠাৎ করে জানতে পারে যে, তাদের এডমিট দেওয়া হচ্ছে না। তারা পরীক্ষা দিতে পারবে না। তারা দেশের সেবা করে জীবনকে সুখী করতে পাবে না। তারা ছুটে যায় আরক্ষণ ভবনে। সেখানে জানতে চায় তাদের এডমিট কেন দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে জানানো হয় তাদের মাথা ঢাকা আছে, তারা হিজাব পরেছে, ছবির সমস্যা। তাই এডমিট দেওয়া হবে না। বঞ্চিতরা সংবিধানিক অধিকারের কথা বলে। দেশের আইনের কথা বলে কিন্তু কিছুতেই কাজ হল না। তারা আইনের পথে অধিকার আদায়ের যাত্রা শুরু করলে তাদেরকে সরকার পক্ষ হুমকি দেয় যে, ১৪৪ লাগানো হবে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। তাদের নিকট ছাতা না থাকায় অফিসের মধ্যেই বারবার সিংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে সরকার পক্ষকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে, হিজাব পরেও চাকরী করা যায়। আইন অনুমতি দিয়েছে। অবশেষে তাদেরকে বৃষ্টিবহুল আবহাওয়া সত্বেও আরক্ষণ ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং হুমকি দেওয়া হয় যে, জীবনে কোন চাকরী করতে পারবে না যদি বেশী কথা বল।

    সরকার পক্ষ তাদের আবেদনে কর্ণপাত না করলেও তারা অধিকার আদায়ের আওয়াজ তুলতে থাকে। তাদের আওয়াজের সাথে বিভিন্ন সংগঠন আওয়াজ মিলাতে থাকে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম এই সংবাদ ছড়িয়ে দেয়। এই বিষয়টি এখন জাতীয় স্তরে প্রশ্ন তুলেছে যে, বিজেপি বিরোধী একমাত্র বিকল্প হিসাবে বিবেচিত, মুসলিমদের ভোটে নির্বাচিত তৃণমূল সরকার ( ২০২১ নির্বাচনে মোট দেওয়া ভোটের হিসাবে টিএমসি-র মুসলিম ভোট শেয়ার ৬৯.৮৩%, অন্যান্য ভোট শেয়ার ৩১.১৭%

    টিএমসি-র মোট প্রাপ্ত ভোটে  মুসলিম ভোট ২,০০,১৮,৩৯৫, অন্যান্য ভোট ৮৬,৩২,৫২থ) শাসিত পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের সঙ্গে এই আচরণ কিসের ইঙ্গিত বহন করছে। এই প্রশ্নবানে বিব্রত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ এই বৈষম্যের তীব্র বিরোধীতা শুরে করেছে। ইতিমধ্যে ভিবিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা West Bengal Police Recruitment Board কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন এই দাবি জানিয়ে যে, তাদেরকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এই দাবি নিয়ে তারা কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন, যাতে বঞ্চিতরা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়।

    তাই বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জনগণের নিকট আবেদন তারা যেন অধীকার আদায়ের এই আন্দোলনে অংশ গ্রহন করে। “সরকারের নিকট আমাদের দাবি যে, সরকার যেন এই বঞ্চিত চাকরী প্রার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে এবং যে সকল আইন ধর্ম বা ধর্মীয় পোষাককে দেশ সেবার ক্ষেত্রে, সরকারী চাকরীর ক্ষেত্রে অন্তরায় বিবেচনা করে সেগুলি বাতিল করে, কারণ ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। কোন নতুন আইন এই অধীকার বিরোধী হয়ে কার্যকরী হতে পারে না।” চাকরী প্রার্থীদের অধিকারে পক্ষে এই দাবি তুলেছে –

    ★ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট

    ★জামাতে ইসলামী হিন্দ

    ★ পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া

    ★ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন

    ★ অল ইন্ডিয়া ইমামস কাউন্সিল

    ★ এস আই ও

    ★ ওয়েলফিয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া

    ★ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া

    ★  ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল পার্টি

    ★ অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন!