চেন্নাইয়ের হোম থেকে এক নাবালককে উদ্ধার ও বিনামূল্যে তার পরিবারের প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা: মহঃ রিপন

নিজস্ব সংবাদদাতা : ২৮ অক্টোবর চেন্নাই সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের একদল পরিযায়ী শ্রমিককে গ্রেফতার করে জিআরপিএফ ও চাইল্ড লাইন। বাংলাতে কথা বলার জন্য বাংলাদেশী সন্দেহ করে ।তাদের দাবি রাজমিস্ত্রি ছেলেদের সাথে একটি নাবালক ছেলে আছে এবং তাকে কাজের উদ্দেশ্যেই এখানে আনা হয়েছিল। ছেলেটির নাম সাহেব রানা (১৬), পিতা- রেজাউল ইসলাম।শিশুশ্রম কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ তামিলনাড়ু রাজ্যে। সারারাত ঠান্ডার মধ্যে ছেলেটিকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে রেল পুলিশ ও ছেলেটির সাথে থাকা অন্যান্য বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থা করা হয়। ছেলেটির পরিবার বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের মহঃ রিপনের সাথে যোগাযোগ করে। রিপন ঘটনাটি শোনার পর বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রাজ্য সম্পাদিকা মনীষা ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করে। তার পূর্ব পরিচিত এক বন্ধুর সহযোগিতায় চেন্নাই রেল পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। সত্য বাবু সমস্ত প্রমাণপত্র রেল পুলিশকে দেখান। রেল পুলিশ সত্য বাবুকে বলেন ছেলেটিকে আমরা ছেড়ে দেবো তারপর সত্য বাবু ও অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের চোখে ধুলো দিয়ে ছেলেটিকে লুকিয়ে হোমে রেখে আসে রেল পুলিশ।

    কিন্তু রিপনের হার না মানা জেদ মাথায় চেপে বসে। পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যায় রিপন। যোগাযোগ করে JNU ও জামিয়া মিলিয়ার প্রাক্তনীদের সাথে ও বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চে রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলামের সাথে। তারপর হঠাৎই মাথায় আসে The Bahubali আদিল খানের কথা। রিপন ও আদিল দুজনে তিস্তা সেতালাবাদের টিমে কাজ করে। আদিল খানকে সমস্ত ঘটনাটা খুলে বলে রিপন। আদিল তার চেন্নাইয়ের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা কথা দেন আমরা বাচ্চাটিকে যেমন করে হোক উদ্ধার করবে। আদিলের বন্ধু চেন্নাই হাইকোর্টের একজন এডভোকেট নিয়ে সেন্ট্রাল রেলওয়েতে যান ও সেখানকার আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন। রেল পুলিশ জানান ছেলেটিকে ১৪ দিন পর কোর্টে তোলা হবে তারপর উকিল ধরে ছেলেটির পরিবারকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা তাদের সন্তান। রেল পুলিশ যা উপদেশ দেন সেই মোতাবেক চললে ছেলেটিকে পেতে হয়তো ছয় মাস লেগে যেত পরিবারের তাছাড়া গ্রাম থেকে গিয়ে চেন্নাই শহরে লড়াই করাটাও অনেক কষ্টকর। দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়ে ছেলেটির পরিবার। ছেলেটিকে যে হোমে রাখা হয়েছে সেই হোমে দু বছর দেড় বছর ধরে বহু ছেলে এখনো আটকে আছে তাদের পরিবার তাদেরকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। রিপন ,সামিরুল, আদিল সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হিউম্যান রাইটসের আধিকারিকদেরকে সেখানে পাঠানো হয় এবং তাদের দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যায় রেল পুলিশ। তারপর তারা রাজি হয় যদি ছেলেটির বাবা-মা সমস্ত লিগ্যাল ডকুমেন্ট নিয়ে আসতে পারে তবে ছেলেটিকে আমরা ছাড়বো। কিন্তু তারা শর্ত দেয় দুদিনের মধ্যে এখানে আসতে হবে। এবার আপনারাই বলুন তো! বীরভূমের মুরারই থেকে চেন্নাইয়ে পৌঁছানো কি দুদিনের মধ্যে কোনভাবেই একটি প্রান্তিক পরিবারের মধ্যে সম্ভব? খুব কষ্ট হচ্ছিল। প্লেনে যাবার প্রসঙ্গে উঠলে ছেলেটির পরিবার ভয় পেয়ে যায় কারণ ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক তিন জন লোকের চেন্নাই যেতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার (৫০ হাজার) ধাক্কা সেটা একটি গরীব পরিবারের পক্ষে কখনোই জোগাড় করা সম্ভব নয়। রিপন তাদের আশ্বস্ত করে চিন্তা করবেন না আমি টিকিটের ব্যবস্থা করে দেব এবং আপনাদের সন্তানকে আপনাদের বুকে ফিরিয়ে দেব। পরে রিপনের সহযোগিতায় ছেলেটির পরিবারের জন্য তিনটি ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। যেহেতু তৎকাল টিকিট সুতরাং সেই টিকিটের দাম প্রায় ৪২ হাজার টাকা। পুরো খরচ টাই বহন করে চেন্নাইয়ের অর্ণব বাবু ও আদিল খানের বন্ধুরা। ছেলেটির পরিবার চেন্নাইয়ের হোমে গিয়ে সমস্ত লিগ্যাল কাগজপত্র দেখান অবশেষে ছেলেটিকে মুক্তি দিয়েছে চেন্নাইয়ের রেলওয়ে হোম। মহঃ রিপন অর্ণব ও সামিরুল বাবুরা চেন্নাইয়ের একজন এডভোকেটের সাথেও কথা বলে সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখেন যাতে চেন্নাই গিয়ে ছেলেটির পরিবারকে কোন অসুবিধা না পড়তে হয়। মহঃ রিপন জানান, বাঙালি বলে হেনস্থা হতে হচ্ছে বারবার শ্রমিকদের। সরকার দ্রুত ব্যাবস্থা নিক শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য। তাছাড়া পরিচয় শ্রমিকদের জন্য একটি দপ্তর খোলা হোক। ছেলেটির বাবার রেজাউল ইসলাম জানান, আমরা ভেবেছিলাম হয়তো ছেলেটিকে সহজে পাব না কিন্তু বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রিপন অর্ণব সামিরুলদের প্রচেষ্টায় খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে গেলাম। আমাদেরকে নানা রকম আইনি জটিলতায় পড়তে হতো কিন্তু তারা সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা করে দেন । আমি গরিব মানুষ চেন্নাই যাবার মতো আমার সামর্থ্য ছিল না কিন্তু তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে আমার আমার স্ত্রীর এবং দুলাভাইয়ের ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে আমরা চেন্নাই থেকে ছেলেটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি।