উড়িষ্যা থেকে পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করলেন রিপন

নিজস্ব সংবাদদাতা- একটা সময় ভারতবর্ষের বুকে একটা প্রবাদ বাক্য খুব প্রচলিত ছিল ” শো যা বেটা নাহিতো গাব্বার আ যায়েগা” কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে এখন পরিযায়ী শ্রমিকরা ভারতের যে কোন রাজ্যে বিপদে পড়লেই সবার প্রথমে ছুটে আসে মোহাম্মদ রিপন। বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের বছর চব্বিশের এক ছোকরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা ভারত। ভারতবর্ষের যেকোনো রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকরা বিপদে পড়লেই তার কাছে ফোন আসে, ঠিকাদাররা কাজ করিয়ে নিয়ে টাকা দিতে না চাইলেও তিনি উদ্ধার করে দেন বাড়িতে বসে থেকেই। লকডাউনের সময় তিনি হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক উদ্ধার করেছেন এবং খাবার পৌঁছে দিয়েছেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে। শ্রমিকদের কাছে তিনি খুব পরিচিত নাম। ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান বিভিন্ন রাজ্যে অসংখ্য শ্রমিকদের বকেয়া তিনি উদ্ধার করে দিয়েছেন ঠিকাদারদের কাছ থেকে। যে কাজগুলো সরকার, প্রশাসন ও শ্রমিক সংগঠনের করা দরকার সেই কাজগুলো তিনি করে চলেছেন। শ্রমিকদের জন্য এত কিছু করার পরেও এখন পর্যন্ত পাশে দাঁড়াননি কোনো প্রশাসক। একা উদ্যমেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তিনি শ্রমিকদের যেমন উদ্ধার করেন ঠিক তেমনি শ্রমিকদের নিয়ে খুব বড় একটা সংগঠন গড়ে তুলেছে।

    মোহাম্মদ রিপন আমাদের জানান, লকডাউন পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে যারা পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বেশীরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক দিন আনে দিন খায়। শ্রমিকদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকেনা। লকডাউন পরবর্তী সময়ে অনেক শ্রমিক আবার বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে ফিরে গেছে। অনেকে আবার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে। বর্তমান সময়ে আগের মত আর কাজ নেই। সামান্য কিছু কাজ জুটলেও পারিশ্রমিক খুব কম। পশ্চিমবঙ্গের অনেক শ্রমিক বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
    দিন দুয়েক আগে বীরভূম জেলার পাইকর থানার পাঠাগাছি আহাদুল সেখ উড়িষ্যা রাজ্যের জগতসিংপুর জেলার কুগঞ্জ এলাকাতে কাজ করতেন। ঠিকাদারের কাজ করার পর পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন না বলে বাড়িতে চলে আসেন আহাদুল। ঠিকাদারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হতো তার ও তার পরিবারের। ঠিকাদার আহাদুলকে আবার ডেকে নেন টাকা দেওয়ার নাম করে কিন্তু তাকে টাকা দেয়নি বরং চারদিন ধরে আটকে রাখে ও তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় ঠিকাদার।আহাদুল শেখ এর পরিবার ছেলের জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। গ্রামের সামাজিক কর্মী রিকির মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করে।পরে আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং সহযোগিতার চান। আহাদুল শেখের হাড় হিম করা ঘটনা তার গ্রামের লোকের কাছে শোনার পর‌ই উড়িষ্যা রাজ্যের জগতসিংপুর জেলার SP Sir সাথে কথা বলি। SP Sir সমস্ত ঘটনা শোনার পর কুগঞ্জ থানার সাথে যোগাযোগ করে ও আমাদেরকে সেখানকার ওসির নম্বর দেন। সাথে সাথে OC সাথে যোগাযোগ করি তার কিছুক্ষণ পরেই উদ্ধার করা হয় আহাদুল শেখকে। থানার তৎপরতায় সেই রাতেই ট্রেনে করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় আহাদুলকে। আহাদুল আমাদের জানান, আমি উড়িষ্যাতে ঠিকাদারের কাছে কাজ করতাম। কাজ করার দুমাসের টাকা ঠিকাদার দেয়নি তারপর আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম। বাড়িতে আসার পর ঠিকাদারকে ফোন করে টাকার জন্য বললে তিনি বলে আবার কাজে আসতে হবে তারপরে টাকা দিব। আমি টাকার জন্য বাধ্য হয়ে আবারো উড়িষ্যা যায় কিন্তু সেখানে ঠিকাদার আমাকে মারধর করে ও একটা ঘরে বন্দী করে রাখে এবং আমার মোবাইল পর্যন্ত কেড়ে নেয়। আমি ওখানে কাজ করার সময় কয়েকজন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে খুব ভালো পরিচয় ছিল। তারা আমার ব্যাপারটি জানতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গে আমার ভাইয়ের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে।। আমাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে মোহাম্মদ রিপন দাদা। আমাকে কুগঞ্জ থানার পুলিশ উদ্ধার করে সেই রাতেই ট্রেন ধরে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আমি এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক আছি। সামান্য কিছু পয়সার জন্য আমাদেরকে বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে যেতে হচ্ছে। আমরা বিপদে পড়লে আমাদের পাশে থাকার মতো কেউ নেই। জানিনা পরিযায়ী শ্রমিকরা আর কতদিন এভাবে বঞ্চিত থেকে যাবে!

    আবার মুরারই থানার কিছু শ্রমিক মুম্বাই থানেতে কাজ করতে গিয়ে মহা বিপদে পড়েছে। 14 থেকে 15 জন শ্রমিক গুজরাটি একজন ঠিকাদার জায়েস রাঠোরের কাছে কাজ করতেন। ঠিকাদারের কাছ থেকে শ্রমিকরা প্রায়ই 8 থেকে 10 লক্ষ টাকা পাবে কিন্তু কোনমতেই টাকা দিতে চাইছে না ঠিকাদার। মহারাষ্ট্র অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাথে যোগাযোগ করে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে মোহাম্মদ রিপন। খুব সম্ভবত সেই সমস্যাটা সমাধান খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে রিপনের মাধ্যমে।

    বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ নামক একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত রিপন। গণ সংগঠনের সভাপতি সামিরুল ইসলাম ও সম্পাদিকা মনীষা ব্যানার্জি জানান আমাদের সংগঠন ও রিপন এভাবে অনেক শ্রমিকদের উদ্ধার করেছে এবং সবসময় তাদের পাশে আছে। সরকারের উদাসীনতা রয়েছে শ্রমিকদের নিয়ে। অবিলম্বে সরকারিভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে ও পরিচয় শ্রমিকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট দপ্তর খুলতে হবে।