M.A পাস করেও ট্রেনে হকারী করে মুরারইয়ের অন্ধ সাগর দাস

 

    মোহাম্মদ রিপন ,বীরভূম

    “চন্দ্রের যা কলঙ্ক সেটা কেবল মুখের উপরে, তার জ্যোৎস্নায় কোনো দাগ পড়ে না”|কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাটি মনে পড়লেই মনে পড়ে যায় মুরারইয়ের পলশা গ্রামের সাগর দাসের কথা| দুই চোখে দেখতে পান না তবু পড়াশোনা কে ভালবেসে চালিয়ে যাচ্ছেন লড়াই , আর্থিক সমস্যার কাছে হার না মেনে অন্ধ অবস্থাতেই ট্রেনে হকারী করে নিজের বাবা-ও স্ত্রী সন্তানকে দেখাশোনা ছাড়াও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন|এই সমাজের সুস্থ সবল মানুষ যখন অল্প কিছুতেই হার মেনে নেয় ,তখন সাগর দাস এর হার না মানা জেদ সমাজের কাছে একটা দৃষ্টান্ত| সাগর দাস এর কথায় তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন, তারপর দূরশিক্ষা বিভাগে সিকিম এর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন| বাবা মদন দাসের ছোট্ট একটি তেলেভাজা দোকান ,আয় বলতে যৎসামান্য |সেখান থেকে ছেলেকে পড়াশোনা করানো খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছিল মদন দাসের|সাগর দাস আরো পড়াশোনা করতে চাইলে বাবা মদন দাসের কাছে সেটা হয়ে উঠছিল না |সাগর দাস একদিন কবিগুরু কলেজে এসে কলেজের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান বাবুর সাথে দেখা করে|সাগর দাস এর পড়াশোনার আগ্রহ দেখে মেহেদী হাসান বাবু তাকে বলে তোমার বাবাকে সাথে নিয়ে আসতে| সাগর দাস এর কথাই প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম মেহেদী হাসান বাবুর কথা শুনে ভেবেছিলাম বেসরকারি কলেজ হয়তো কোর্স ফি অনেক হবে ,আমি দুদিন পর বাবাকে কলেজে মেহেদী হাসান বাবুর সাথে দেখা করার জন্য নিয়ে আসি, তিনি বলেন আমার বাবা মদন দাস কে কত টাকা তিনি দিতে পারবেন ছেলের পড়াশোনার জন্য ? মদন দাস সপাটে উত্তর দেয় ধারদেনা করে পঞ্চাশ হাজার জোগাড় করতে পেরেছি |কিন্তু মেহেদী হাসান বাবু বড় মনের মানুষ তিনি সপাটে জবাব দেন আপনার ছেলেকে পড়াশোনার জন্য এক টাকাও দিতে হবে না আমার কলেজকে তিনি আমার কলেজে বিনা পয়সায় পড়াশোনা করবে | বর্তমানে তিনি পাইকর কবিগুরু কলেজ অফ এডুকেশনে ডি. এল. এড করছেন|কয়জনই বা মেহেদি হাসান বাবুর মত হয় যে এত তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছিল অন্ধ সাগর দাস কে| সাগর দাস এর কথায় আমি স্যারকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না,স্যারের কৃপায় আমি আবার পড়াশোনা করতে পারছি|কলেজের এক অধ্যাপক জানান সাগর দাস শুধু কৃতি ছাত্র নয় তিনি আমাদের জেলার গর্ব জেলাস্তরে ছাত্র-যুব উৎসবে বেশ কয়েকবার পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে,রাজ্যস্তরে ও অংশগ্রহণ করেছে এই সাগর দাস|সাগর দাস পড়াশোনার পাশাপাশি খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারেন তার মন মুগ্ধ করা সুর যে কোনো মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে|কিন্তু আর কতদিন এই ভাবে জীবন যুদ্ধ চালাবে সাগর দাস?কলেজে ক্লাসের দরুন সাগর দাসের ট্রেনে হকারী টাও নিয়মিত হয় না|আয়ের উৎস বলতে বাবার তেলেভাজা দোকান | পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যদি কোন প্রকল্পের সাহায্য বা সাগর দাস কে কোন কাজ দেন তবে হয়তো তার ভেসে যাওয়া পরিবারটা নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে|