| |
|---|
রবিউল ইসলাম, সাগরদিঘি : সপ্তদশ শতক থেকে ভারতবর্ষে ইংরেজরা বাণিজ্য করার জন্য বসতি স্থাপন করে। তারপর ধীরে ধীরে তারা ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার দিকে হাত বাড়ায়। অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। তারপর থেকে ভারতের উপর চলেছে ইংরেজদের শোষণ এবং অত্যাচার। সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ থেকে সম্পদ লুট করে নিয়ে গিয়ে ব্রিটেন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ভারতবর্ষে দেখা দিয়েছে একের পর এক মহামারী, খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। যতদিন গেছে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে।পরাধীনতার বেড়াজালে যতই ভারতবাসী জড়িয়ে পড়েছে, সময়ের সাথে সাথে ততই তীব্র হয়েছে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির বিস্তারের মাধ্যমে ভারতবাসী জানতে পেরেছে ফরাসি বিপ্লবের কথা, বুঝেছে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার গুরুত্ব।তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তারা ইংরেজ শাসকদের কাছে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করতে শুরু করেছিল। সেই দাবিদাওয়া গুলির অনাদায়ে ভারতবাসী রাস্তায় নেমেছে, শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এইভাবে ধীরে ধীরে বৃহত্তর আন্দোলন এবং সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেদকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় ছিন্নমূল। তাঁরা দলে দলে র্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ মানুষই চোখের জলে নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা হয় বাংলা ও বিহারেও। তবে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষজন সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।
দেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মবলিদান দিবস আরও বেশি করে স্মরণ করার দিন ১৫ অগস্ট। তাঁরা নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তাঁদের সাহসিকতা-বীরত্বের জন্যই নিজেদের দেশে মুক্ত শ্বাস নিতে পারছেন ভারতবাসীরা।স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজ ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। অর্থাৎ ব্রিটিশদের ভারত ছে়ড়ে যাওয়ার ৭৪ বছর পূর্তি।
রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘির বাসস্ট্যান্ডে ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হল।এদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সাগরদিঘির বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যান পালন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রত সাহা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জি, অধ্যাপক সপ্তর্ষি সাহা, রঞ্জন সাহা, ব্লক যুব সভাপতি কিসমত আলি, বরুণ দত্ত প্রমুখ। এদিন স্বাধীনতার ৭৪তম বর্ষ পূর্তিতে ও ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দরিদ্র মানুষের হাতে বস্ত্র তুলে দিলেন রাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রত সাহা।


