|
---|
মহিউদ্দীন আহমেদ: সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নেওয়া সেখ আব্দুল লালন দারিদ্রতাকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে। সাধারন পরিবারে থেকে মানুষ হয়েছেন সাধারন ভাবেই। অভাবের তাড়নায় পড়াশুনো দৌড় বেশী দূর এগোই নি। পরে ব্যবসার হাত ধরে জীবনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তারপরে নিজে ব্যবসা করে যেমন নিজে হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত তেমনি ভুলে যান নি তার পিছনের ফেলে আসা দিনগুলি। তার ব্যবসার লাভের টাকা যে নিজেই ভোগ করেন এমন নয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার আউগ্রামের গেঁড়াই গ্রামের ব্যবসায়ী সেখ আবদুল লালন আজ বর্ধমানের এক নামজাদা দানশীল, সমাজসেবী ও পরোপকারী ব্যাক্তি। তার থেকেও বড় কথা তিনি ভাবেন জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সমাজের সর্ব সম্প্রদায়ের মানুষের কথা। তার দান করার মানষিকতা ও আন্তরিকতা দেখে এলাকার লোকে তার নামের আগে বসিয়ে দিয়েছেন “দাতা” শব্দটি। নাম এখন দাতা সেখ আব্দুল লালন। লালন সাহেব বলেন ছোট থেকে খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। বড় হয়ে ব্যাবসা শুরু করি। বালি পাথরের ব্যাবসা থেকে সিভিল কন্সট্রাকশন। পরে গাড়ীর টায়ার সহ আনুসাঙ্গিক ব্যাবসা। কিন্তু রোজগারের লাভের টাকায় নিজের আরাম আয়েসের জীবন কাটনোর জন্য ভোগ তিনি করি না। সারা বছর ধরে হাজার হাজার গরিব দুঃস্হ অবসহায় মানুষকে বস্ত্র বিতরন, গরিব – নিম্নবিত্ত ঘড়ের ছেলে মেয়েদের স্কুল পাঠ্য, অসুস্হ্য মানুষের আপদকালীন চিকিৎসার জন্য যে আসে রোগীর অবস্হার গুরুত্ব বোঝে প্রয়োজন মতো দান করেন লালন সাহেব। এমনকি গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য নিজের টাকায় কিনে রেখেছেন আস্ত একটা চারচাকা বোলেরো গাড়ী। যা এখন এ্যম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়। গরিব মানুষের রাত বিরেত দরকার হলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হ্যসপিট্যাল বা বোলপুর মহকুমা মাল্টি সুপার স্পেশালিষ্টি হাসপাতালে রোগীদের বহন করে ফ্রী সার্ভিসে। দাতা আব্দুল লালনের দান খয়রাত শুধু যে তার নিজের এলাকায় তা নয়। দানের সুনাম পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান থেকে বিহার, ঝাড়খন্ড পর্যন্ত। দাতা সেখ আব্দুল লালন আরো বলেন, ঝাড়খন্ড বিহার থেকে অনেক শ্রমিক বীরভূম, বর্ধমানে কাজ করতে আসে। সেই সুবাদে তারাও আউসগ্রামের এই দাতা লালনের নাম শুনেছেন। কেউ অসুস্হ্য হলে বা কারোর মেয়ের বিয়ে হলে যখন যার দরকার, বিপদের সময় লালনের কাছে আসেন। সাহায্যের হাত বাড়ান লালন। সারা বছর ধরে দান করা ছাড়াও হঠৎ কারোর বাড়ী আগুনে পুড়ে গেলে বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে দানের হাত বাড়িয়ে দেন লালন। প্রতি বছর রমযান মাসে একাধিক মসজিদে হাজার হাজার মানুষকে ইফতার করান। নিজে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে গ্রামের কবরস্হানের যেমন সুন্দরভাবে তোরন করে বাউন্ডারীওয়াল করে দিয়েছেন তেমন প্রতি বছরই ঈদ ও দূর্গাপুজোতে বস্ত্র বিতরন করেন হাজার হাজার মানুষকে । যুব সমাজকে ক্রীড়া মনোযোগী করে তুলতে ফুটবল প্রতিযোগিতার যেমন আয়োজন করেন তেমনি দুঃস্হ মেধাবী ছাত্র- ছাত্রীদের বই – খাতা দিয়েও সাহায্যের হাত বারান। তার এলাকায় সর্ব ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বাতাবরন বজায় রাখতে দাদা লালন উৎসব নাম দিয়ে সম্প্রীতির মেলাও করেন প্রতিবছর। যেখানে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবং সর্ব সম্প্রদায়ের মানুষের মহা- মিলন ঘটান। ঘটনাক্রমে তার বাবা আব্দুল হালিম ও মা হালিমা বিবি তার নাম লালন রাখাই তিনি আবার লালন ভক্ত।
মা হালিমা বিবির মৃত্যুর পর মায়ের নামে হাজার হাজার গরিব মানুষকে বস্ত্র বিতরন করেন। সঙ্গে একটি করে চারা গাছ বিতরন করে নজির সৃষ্টি করেছেন মায়ের স্মৃতিতে। একটি মজার কথা শেষে না লিখলেই হয় না, নির্বাচনে ভোট দানের পর সব দলের ভোট দাতাদের নিজের উদ্যোগে টিফিন ও জলের বোতল দেন। তার উদ্দেশ্যে এক টিফিন প্যাকেট নিয়ে সবাই খুশি করে খাও আর ভোট- রাজনীতি করো আর দল মত জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে মিলেমিশে থাকো। সবাই সবাইকে ভালোবাসো। বছর চল্লিশের দাতা আব্দুল লালন জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে যে ভাবে গরিব, দুঃখী, অভাবী মানুষকে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান, এখনকার দিনে আত্মকেন্দ্রিক সমাজে তা সচরাচর দেখা যায় না। দাতা আব্দুল লালন সমাজের এক আইকন।