আলিয়াকাণ্ডে প্রকাশ্যে এল মুসলমান সমাজের কঙ্কালসার চেহারা

আসাদুল ইসলাম,কলকাতা: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছিল মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার সমাধান হওয়ায় সাময়িক স্বস্তির খবর পাওয়া গেল বটে কিন্তু মুসলমান সমাজের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ্যে চলে এলো। দুই পক্ষের দোষারোপ আর কাদা ছোড়াছুড়ি দেখিয়ে দিল সমাজের প্রকৃত রূপ। সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজে ‘কওম’ শব্দের অর্থ কতটা ফাঁপা একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো করে তুলে ধরল বিবাদমান দুই পক্ষ। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ক্ষমতার চেয়ারে থাকলে কেউ কারও তোয়াক্কা করে না। জাতীয় স্বার্থ, হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ আর সাধারণ মুসলমানদের স্বপ্ন-আশা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পিছপা নন উপরতলার মহান মানুষেরা। অথচ সভা সমিতিতে গিয়ে এঁদেরই আবার টেবিল চাপড়ে কওম কওম বকবকম কান ঝালাপালা করে দেয়। ওই বকবকম যে আসলে হাওয়া ভরা থলি নির্গত শব্দ ছাড়া কিছু নয় তা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে টানাটানির ঘটনা সাধারণ গোবেচারা মুসলমানদেরও বুঝিয়ে ছাড়ল। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে যে সমাধান হল তাতেই রক্ষে। সিং উচিয়ে আসার মতো পিছুটান দিয়ে যেভাবে তেড়ে আসার ছবি পাওয়া যাচ্ছিল চারিদিকে তাতে আলিয়ার প্রাণ সংশয় না হয়ে যায়, এমন আতঙ্ক তাড়া করছিল শিক্ষানুরাগীদের।

    এতদিন সকলেই জেনে গেছেন—- আলিয়ার অর্থ আটকে রাখার কারণে নানা কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এজন্য সংখ্যালঘু দপ্তরের সচিবের দিকে আঙুল তুলছিলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম এবং টাকা ফেরত যাওয়ার কথা উঠে আসে। প্রকাশিত খবর ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বার্তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় কোনো পক্ষই ধোয়া তুলসীপাতা নন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য একজন অযোগ্য ব্যক্তি বিশেষকরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালানোর ক্ষেত্রে তা কাজের সূত্রে এখন সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলেও ভিসি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সার্চ কমিটি না জেনেই এমন নিয়োগ দিয়েছিলেন সেটা ভাবা খানিক বাড়াবাড়ি রকমের বোকামি হয়ে যাবে। কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের বিশেষ অভিজ্ঞতা না থাকা একজন কীভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারেন তা পাড়ার বখাটে ছেলেরাও জানে। রাজনৈতিক কর্তাদের সুনজর ছাড়া এমন পদপ্রাপ্তি স্বপ্নে সম্ভব মাত্র। কিছুদিন পর শাসক পক্ষের কিছু মানুষ ‘অযোগ্যতা’ খুঁজে পেলেন,নিয়োগের সময় পাননি। মাঝখান থেকে অযোগ্য ব্যক্তিকে বসিয়ে সোয়া একশো কোটির বেশি অর্থ খরচ করতে না পারায় ফিরে যাওয়ার ক্ষতি হলো তো বটেই, অন্যান্য কাজেও নিশ্চিত সুষ্ঠু কাজ সম্পাদন করতে না পারার দরুন সংখ্যলঘু সমাজের হক হরণ করে নেওয়া গেল। মানে ক্ষতি ভিতরে-বাইরে সমান ভাবেই হল।

    আরও একটা বিষয় কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে যে, উভয়পক্ষের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নিশ্চিত আছে। না থাকলে এক বৈঠকে, দোষী ধরা পড়ে যাওয়ার পর মাথা নিচু করে হাত কচলে জ্বি হুজুর বলে যেভাবে মেনে নেয় অনেকটা সেভাবেই, অর্থ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ কেন মেনে নেওয়া হলো? বাইরে যেভাবে গর্জন হচ্ছিল সে তুলনায় বর্ষণের এমন হাল কোন যাদু স্পর্শে? তবে শেষমেশ দুই পক্ষকে ক্ষান্ত করা গেল নাকি হাতার আড়ালে কিছু লুকিয়ে রেকে সন্ধি হল,তা খোদায় মালুম।

    আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ঘটা এই অনভিপ্রেত ঘটনা মুসলমান সমাজের চরিত্রকে বেআব্রু করে এনে ফেলল সকলের সামনে। মুসলমানদের দুই দপ্তর আর মুসলমান আধিকারিকদের লড়াই গোটা সমাজের মাথাই যে প্রতিবেশী সমাজের কাছে হেঁট করে দিচ্ছে তা উচ্চশিক্ষিত মানুষরা বুঝলেন না। দুই পক্ষের লড়াইয়ে ডেকে আনা আলিয়ার আর্থিক সঙ্কট দেখিয়ে গেল সংখ্যালঘু সমাজের সঙ্কট আসলে আরও কত ভয়ঙ্কর ,কত গভীর।