কেউ একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া কেউ কলেজে পড়েন সোমবার দিনভর রাস্তায় বসে তাঁরা প্রতিবাদ জানালেন নির্বিচারে গাছ কাটার বিরুদ্ধে

নিজস্ব সংবাদদাতা : কেউ একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। কেউ কলেজে পড়েন। সোমবার দিনভর রাস্তায় বসে তাঁরা প্রতিবাদ জানালেন নির্বিচারে গাছ কাটার বিরুদ্ধে। জৈষ্ঠ্যের তপ্ত দুপুরে তারকেশ্বরের চাউলপট্টি মোড়ে বটগাছের ছায়ায় তাঁদের সঙ্গে শামিল হলেন কিছু শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষ বা পরিবেশকর্মী।

    তারকেশ্বর থেকে চকদিঘি হয়ে মেমারি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ করছে পূর্ত দফতর। অভিযোগ, ওই কাজের জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। বন দফতর ৮২৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিলেও প্রায় দেড় হাজার গাছ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা দূরে, এমন অনেক গাছ কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেই সব গাছ বাঁচাতেই কিছু যুবক-যুবতী আন্দোলনে নেমেছেন। ধনেখালির দশঘরায় এই প্রতিবাদের কারণে দিন কয়েক আগে প্রতিবাদীদের থানায় ডেকে পাঠানো হয়।পরিবেশের স্বার্থে অবশ্য তাঁরা পিছু হঠতে নারাজ। এ দিন পরিবেশকর্মীদের সংগঠন তারকেশ্বর গ্রিন মেটস এবং নালিকুলের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ অবস্থান হয়। পোস্টার লেখা, বক্তব্য, গান, কবিতা, লিফলেট বিলির পাশাপাশি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর কাছে গণস্বাক্ষর করা ওই প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই বন দফতর, হুগলির জেলাশাসক, পূর্ত দফতরে গাছ কাটা বন্ধের আর্জি জানানো হয়েছে। গণস্বাক্ষর করা প্রতিবাদপত্র তাঁদেরও দেওয়া হবে। রাজ্যের পূর্ত এবং বন দফতরের কর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে চন্দননগরের পরিবেশ আকাদেমিও।

    জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রতিদিন যানবাহন বাড়ছে। তাই, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণ জরুরি। উন্নয়নের কাজে নির্দিষ্ট প্রকল্প অনুযায়ী গাছ কাটার অনুমতি দেয় বন দফতর। অযৌক্তিক ভাবে কোনও গাছ কাটা হয় না। যত গাছ কাটা পড়ে, তার পরিবর্তে বহু সংখ্যক গাছ লাগানোর উপরে জোর দেওয়া হয়। তবুও, ফের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখতে বলব।’’

    আন্দোলনকারীদের তরফে ইমন সাঁতরার বক্তব্য, ‘‘আজকের জলবায়ু-সঙ্কটের দিনে উন্নয়নের যাবতীয় কাজ পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখে, প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচিয়ে করা দরকার। না হলে মানুষ তথা পরিবেশের উপরে খুব খারাপ প্রভাব পড়ে। এখনও প্রায় দু’শো গাছ রয়েছে, যেগুলিকে না কেটেই দিব্যি রাস্তা বাড়ানো যাবে বলে আমরা মনে করি। গাছ বাঁচাতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।’’ তিনি জানান, ওই সব গাছের মধ্যে প্রাচীন বট, অশত্থ, আকড়, শিরীষ, শিমূল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, খয়ের, করঞ্জ, নিম প্রভৃতি গাছ রয়েছে। অসংখ্য পাখি এই সব গাছে থাকে। গাছ কাটলে তারাও বেঘর হবে।

    আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, একটি গাছ বাঁচাতে কোথাও রাস্তা যদি এক ফুট ছোট করতে হয়, পরিবেশের কথা ভেবে সেটাই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। না হলে, প্রযুক্তির সাহায্যে আস্ত গাছ তুলে অন্যত্র বসানোর বিকল্প ভাবনা করা হোক। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘যা করা হচ্ছে, উন্নয়নের স্বার্থেই। অনাবশ্যক কিছু করা হচ্ছে না। ওঁরা আমার কাছে এলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। প্রয়োজনে আমাদের দফতরের তরফে এ নিয়ে সেমিনারও হতে পারে।’’