|
---|
ইয়াসিন কবির,নতুন গতি,বাংলাদেশ :
এমনটা শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব! রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হয়েও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন কৃতী মানুষকে সম্মান প্রদর্শনের নজির তৈরি করেছিলেন আজ থেকে ২২ বছর আগে, আমি ছিলাম তার সাক্ষী।
অসুস্থ থাকায় ২৪ মার্চ ১৯৯৮, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি কবি সুফিয়া কামাল। অনুষ্ঠান শেষে কবির ধানমন্ডিস্থ বাসভবন ‘সাঝের মায়া’য় গিয়ে তাঁর গলায় স্বাধীনতা পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজো তিনি ছুটে চলেছেন একই রকম ভাবে- মানবিক সম্পর্ক তাঁর কাছে আজো অমূল্য। বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, লেখিকা ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামালের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২০ নভেম্বর শুক্রবার। ১৯৯৯ সালের এই দিনে কবি মারা যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বেগম সুফিয়া কামাল-এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে সুফিয়া কামালকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ উল্লেখ করে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
‘জননী সাহসিকা’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সুফিয়া কামাল সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর বহুল গুণাবলীর কারণে বাংলার মানুষ তাঁকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করে।
সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। সে সময় বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা করেন। তিনি নিজ উদ্যোগে নিজেকে শিক্ষিত করেই ক্ষান্ত হননি, পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
সুফিয়া কামাল ১৯২৩ সালে রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়।তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যোগ দেন।
সুফিয়া কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবি জানান। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে কবি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধন নির্বাচিত হন। তিনি শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ সম্মান লাভ করেন।
সুফিয়া কামালের লেখা কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে-সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণ কাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’।সুফিয়া কামাল ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।