স্টোরিমিররে সিদ্ধার্থ সিংহ

তানিয়া চট্টোপাধ্যায় : আজ। ১৭ অক্টোবর।শনিবার। সন্ধে ঠিক ৬টায়। যাঁরা ভারতের দশ-দশটি প্রধান ভাষা নিয়ে কাজ করছেন, যাঁদের শুধু লেখক সংখ্যাই পঞ্চাশ হাজারের ওপর, যাঁদের পাঠক সংখ্যা লজ্জা দেবে পৃথিবীর যে কোনও মুদ্রিত কিংবা অনলাইন পত্রিকাকে, যাঁরা বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহের কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস, বিষয়ভিত্তিক গদ্য এবং শিশুতোষ লেখা নিয়মিত প্রকাশ করেন, একদিনে দফায় দফায় তাঁর বারোটি গদ্য প্রকাশ করে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন, সেই ‘স্টোরিমিরর’-এর হয়ে আজ সিদ্ধার্থ সিংহ সরাসরি লাইভে আসছেন ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ঠিক ৬ টায়।

    স্টোরিমিররের পথ চলা শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। এই ওয়েব ম্যাগের পাশাপাশি তাঁরা ই-বুক এবং মুদ্রিত বই একের পর এক প্রকাশ করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই বেরিয়ে গেছে প্রায় কুড়িটি দেশের লেখকদের লেখা তিনশোটির উপর বই।

    বিশিষ্ট লেখক বিভু‌ দত্ত রাউত শুধুমাত্র সাহিত্যকে ভালবেসেই গড়ে তুলেছেন এই মুহূর্তে ভারতের সব থেকে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা সাহিত্যচর্চার অনলাইন প্লাটফর্ম‌ এই স্টোরিমিরর প্রতিষ্ঠানটি।
    তাঁর সাহিত্য বিষয়ক নানান কর্মকাণ্ডের মধ্যে নতুন সংযোজন— ‘স্টোরিমিরর সাহিত্যের আড্ডা’।

    সেই আড্ডায় আজ থাকছেন বেঙ্গল ওয়াচ-এর সাপ্তাহিক ‘সাহিত্যের পাতা’র সম্পাদক, বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ।

    তিনি উত্তর দেবেন নানান প্রশ্নের এবং বলবেন তাঁর লেখক জীবনের অনেক অজানা কথা।

    একজন মুষ্টিযোদ্ধা থেকে কী ভাবে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করলেন, কাদের কাদের সান্নিধ্যে এসেছেন, কে তাঁকে বলেছিলেন গদ্য লেখার কথা, সানন্দা পত্রিকায় জীবনের প্রথম গল্প প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই কী ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি, মুখোমুখি হয়েছিলেন পাঁচ কোটি টাকার মামলার, সে সবও উঠে আসতে পারে এই স্টোরিমিরর সাহিত্যের আড্ডায়।

    কিন্তু কে এই সিদ্ধার্থ সিংহ? নীচে রইল তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

    সিদ্ধার্থ সিংহের পরিচিতি ২০২০ সালে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে ‘বঙ্গ শিরোমণি’ সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে।  ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। পরে সত্যজিৎ কোটালের নাট্যরূপ এবং নির্দেশনায় প্রথম নাটক‌ মঞ্চস্থ হয় শিশিরমঞ্চে— বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল।

    ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য।

    ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো পঁতাল্লিশটি। তার বেশির ভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। ষোলোটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং লিখতেও পারেন।

    এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যৌথ ভাবে পাঁচশোর ওপর সংকলন সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে।
    এই মুহূর্তে সম্পাদনা করছেন বেঙ্গল ওয়াচের সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাহিত্যের পাতা’। যেটি প্রকাশিত হয় প্রত্যেক রবিবার। আমেরিকার উড়ালপুল পত্রিকার কলকাতা সম্পাদক।

    তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। লিখেছেন বেশ কয়েকটি ছায়াছবির চিত্রনাট্য। বেশ কয়েক বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া এই মুষ্টিযোদ্ধা এক সময় নিয়মিত মডেলিংয়ের কাজও করেছেন।

    তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে।
    ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখের মধ্যে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, মুক্তগদ্য, প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট তিনশো এগারোটি লেখা প্রকাশিত হওয়ায় ‘এক মাসে সর্বাধিক লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড’ তিনি অর্জন করেছেন।

    ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের ‘শ্রেষ্ঠ কবি’ এবং ১৪১৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পকার’-এর শিরোপা।

    আজ। ১৭ অক্টোবর। শনিবার। ভারতীয় সময় সন্ধে ঠিক ৬টায়।