|
---|
উজির আলী, নতুন গতি, চাঁচল: বিদ্যুৎ পরিষেবা পেলেও আর্থিক সঙ্কট থাকায় বকেয়া পরিশোধ করতে পারেননি। তিন বছর ধরে লন্ঠনের আলোতেই পড়াশুনা চালিয়েছেন দিনমজুর বাবার যমজ দুই কন্যা।এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য পেয়েছে তারা।
মালদহের চাঁচল থানার নয়াটোলা মহানন্দাপুর হাইমাদ্রাসা থেকে এবারের উচচ মাধ্যমিকে তাক লাগিয়েছে যমজ দুই বোন। কলা বিভাগে সালেহা খাতুন ৪৬২ ও জান্নাতুন ফিরদৌসী ৪৫০ নং পেয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই বোন প্রথম ও দ্বিতীয় হয়ে তাক লাগিয়েছে এলাকায়।
চাঁচল ১ নং ব্লকের মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গৌড়িয়া-টেঙরিয়া পাড়ার দিনমজুর সলেমান আলীর মেয়ের সাফল্যে বিদ্যালয় সহ গোটা এলাকার মানুষ খুশিতে উল্লিফূত।
আর পাঁচটা মেয়ের মতো যমজ মেয়ে দুটির স্মার্ট ফোন নেই। তাই শুক্রবার ০৪ টে থেকেই নিজের ফলাফল দেখার জন্য গ্রামের তথ্য মিত্র কেন্দ্রে ঘন্টা খানেক ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। সময় হতেই ১০ টাকা দিয়ে ফলাফল দেখে। তারপরেই নম্বর দেখে বাজিমাত।
উল্লেখ্য পরিবারে রয়েছে দুই যমজ বোন ও বাবা-মা, বড়দিদির বিয়ে হয়েছে।
নিজেদের চাষের জমি নেই। মরসুম অনুযায়ী অন্যের জমিতে ফসল কেটে সর্ব বৎসরের আহার জোটে তাদের। পরিবারে দিনমজুর বাবা ছাড়া কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নেই। সাধারন ঘরের মতো ভালো চলে না সংসার।ফলে সংসার সচল রাখতে আর মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ৫০ বছর বয়সী বাবা সলেমান গ্রামের কৃষকদের জমিতে ক্ষেতমজুরী করে।
মাটির বাড়ির বাঁশের বেতের গোছানো জানালার ধারে পড়াশুনা চলত দুই বোনের। সংসারে হাল টানতে পারেন না বাবা। অভাবের থাবা বসিয়েছে বহুদিন ধরেই। এককালীন বিপিএল থেকে বিদ্যুৎ কানেকশন মেলে। ২০১৮ সালে ৫০০০ টাকা বিল আসে। অভাবের কারনে সময়মতো বিল না চুকানোয় নভেম্বরে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করে বন্টনকারী। ঘরে রয়েছে শিক্ষার্থী তাই পুনরায় কানেকশনের জন্য ৩০০০ টাকা বিল জমা করেন সলেমান আলী। সম্পূর্ন পরিশোধ না করলে কানেকশন দেওয়া হবে না জানিয়েছিলন বন্টন কারী। এমনটাই জানিয়েছেন দিনমজুর সলেমান আলী।
তবে ডিজিটাল জমানায় লন্ঠনের আলোতে পড়াশুনা চালিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়েছে যমজ দুই বোন। পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের কোন শকের কাজ বলতে কিছু ছিলনা। বিনোদনেও তাদের ইচ্ছা প্রকাশ অমত। কারন নেই তাদের স্মার্ট বা কোনো ফোন।
পড়াশুনার পাশাপাশি বেশিরভাগটাই বাবা মায়ের সাথে মাঠের জমিতে কাটিয়েছেন। অন্যের জমিতে ধান, সরষে কাটাতে তারা দক্ষ। গ্রাম্য জনজীবনে তাদের নেই কোনো উৎসাহ। উনুনে ভাত রান্না করে মাটির বাড়িটি ঝকঝকে রাখা তাদের প্রতিদিনের কাজ।
সালেহা ও জান্নাতুন জানান, আমরা একটাই টিউশন নিয়ে পড়াশুনা করেছি।
একটা পাঠ্য পুস্তক দুইবোনে পড়েছি।
বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে প্রতিদিন পায়ে হেটে টিউশন যেতে হত। যদিও সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল মিলেছে তবে তা বিকল হয়ে যায়। আর্থিক সঙ্ককে মেরামত করা হয়নি। কলা বিভাগের গৃহ শিক্ষক মুর্শেদ আলি যথেষ্ঠ পরিশ্রম করেছে তাদের সাফল্যে। অবদান তারও থাকছে।
সালেহা খাতুন ও জান্নাতূন ফিরদৌসী জানায়, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন আদর্শবান নার্স হতে চায়, মানুষের সেবা করতে চাই। তবে তাদের ইচ্ছা পূরন হবে কি? দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।
মা রৌশনা বিবি অনুরোধ, সবার সহযোগিতায় তার মেয়ে ভালো ফল করেছে। মেয়ে দুটির নার্স হয়ে মানুষের সেবা করার খুব ইচ্ছা। মেয়ে শান্ত স্বভাবের, পড়াশুনা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকত। পড়াশুনার ফাঁকে মেয়ে ঘরের রান্না সহ ফসল কাটতে দক্ষ। তবে মেয়দের পরবর্তী শিক্ষা অর্জনে বড়ো দুশ্চিন্তা।
নয়াটোলা মহানন্দাপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আলম জানান, যমজ মেয়ে দুটি বরাবরই মেধাবী। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা দিয়েছিলেন। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতেও ভালো ফল করবে। তাদের উচ্চ শিক্ষায় যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য তিনি সরকার ও সমাজের হৃদয়বান-বিত্তবানদের কাছে সব প্রকার সহযোগিতার দাবি জানাবেন।