বাংলার শিক্ষক চিরঞ্জিতের করোনা টিকার সফল ট্রায়াল, বাড়ি ফিরলেন

নতুন গতি ওয়েব ডেস্কঃ মানব দেহে করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের জন্য ডাক পেয়েছিলেন বাংলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর৷ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডাক পেয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর৷ সফল ট্রায়ালের পর বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে নিজের বাড়িতে ফিরলেন চিরঞ্জিত৷
২৯ জুলাই চিরঞ্জিতের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়৷ ১২ অগাস্ট প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ডোজ পান তিনি৷ করোনা যুদ্ধে সামিল হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে চিরঞ্জিত বলেন, ‘‘প্রোটোকল অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ই বলা সম্ভব নয়৷ তবে এটুকু বলতে পারি, আমি করোনা প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ফেজে অংশগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি৷ কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার পর আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ৷ এক মাসেরও বেশি সময় ভুবনেশ্বরে থাকার পর ঘরে ফিরে এসে খুবই ভালো লাগছে৷ দ্বিতীয় ডোজের পর জ্বর, গায়ে, হাত-পায়ে ব্যথা হয়েছিল৷ তবে এখন কোনও সমস্যা নেই৷’

    ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানান, ফেজ ওয়ান ট্রায়াল যথেষ্ট কঠিন৷ ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অনেক বাধা নিষেধের মধ্যে রাখা হয়৷ হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য চিরঞ্জিতকে অভিনন্দনও জানান তিনি৷ প্রথম ফেজে সারা ভারত থেকে যে ৩৭৫ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে চিরঞ্জিতই একমাত্র বাংলার প্রতিনিধি৷ দ্বিতীয় ফেজে কোনও বঙ্গ সন্তান অংশ নেবেন কিনা, তা অবশ্য জানা নেই চিরঞ্জিতের৷

    গত এক মাস ধরে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন দুর্গাপুরের এই শিক্ষক৷ তাঁর শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কিনা, সেদিকে নজর রাখা হয়েছে৷ প্রোটোকল অনুযায়ী ১৯৪ দিন পর্যন্ত চিরঞ্জিতের শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখা হবে৷ প্রথম ভ্যাকসিন ডোজ নেওয়ার ১০৪ দিনের মাথায় প্রথম চেকআপ হবে তাঁর৷ এরপর ১৯৪ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার চেকআপ করা হবে চিরঞ্জিত ধীবরকে৷
    কোভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য তিনি উপযুক্ত কি না নিশ্চিত হতে ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হার্টের সমস্যা, কিডনি এবং লিভার-সহ প্রায় ৫০ রকমের টেস্ট করা হয়। চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই তাঁর ফিট ঘোষণা করা হয়৷ রিপোর্ট ঠিক থাকায় ২৯ জুলাই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয় চিরঞ্জিতের শরীরে৷ চিরঞ্জিত বলেন, ‘‘আগের দিন রাতে একাধিক চিন্তা ভর করেছিল মাথায়৷ কেমন হবে, কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে নানান চিন্তা ভীড় করেছিল৷ কারণ এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানতান না৷ যাঁরা দ্বিতীয় ফেজে অংশ নেবেন তাঁরা জেনে গিয়েছেন এর সফলতা৷ তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল আমাদের উৎকণ্ঠা৷ দেশের জন্য লড়াই করার অনুপ্রেরণা নিয়েই ট্রায়ালে অংশ নিই৷ সফল হবই, এই আত্মবিশ্বাস ছিল মনে৷