|
---|
বাবলু হাসান লস্কর, কুলতলী : দক্ষিণ ২৪ পরগনা আয়লা, বুলবুল,আমফান,ফণী, ইয়াস, রেমালের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনে প্রতি বছর লেগেই আছে। এর ফলে নদী বাঁধ ভাঙনের দরুন নদীর পাড়ের দফারফা হচ্ছে। একদিকে তাল ও খেজুর বীজ রোপন করার ফলে এই গাছগুলি দীর্ঘদিন অক্ষত থাকবে কারণ এগুলি গবাদি পশু খায় না।তাছাড়া সমস্ত গাছের বীজের বেশি কিছু পরিচর্যারও প্রয়োজন পড়ে না। তালগাছের শিকড় মাটির গভীরে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে তাই সুন্দরবনে যত জোরে ঝড় আসুক না কেন তালগাছ তা নিজে রক্ষা করতেই পারবে।এজন্য বিশেষজ্ঞদের মতে নদী বাঁধ রক্ষা করবে এই তালগাছ। এছাড়া তাল মিছরি অনেক উপকারী গুণ সমৃদ্ধ যেমন- অ্যানিমিয়া, হাড়ের সমস্যা, সর্দি কাশির উপশম, চোখের দৃষ্টি বাড়ানো, কিডনি স্টোন রোধ করা, পেটে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের আলসার, কনস্টিপেশন নিয়ন্ত্রণে তালমিছরি উপকারী। রসনাতৃপ্ত বাঙালির প্রিয় পিঠে পুলীতে তালের ব্যবহার সেই অনেককাল আগে থেকেই। তালের গুড় এক্ষেত্রে অন্যরকম মাত্রা যুক্ত করে। এছাড়া এরকম অর্থকরী ফসল থেকে লাভজনক ব্যবসা মিলবে, বাড়বে রোজগার এমনই মত পরিবেশবিদদের। অন্যদিকে কেওড়া একটি ম্যানগ্রোভ গাছ, যা সুন্দরবনের লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায়। কেওড়ার ফল থেকে টক, আচার তৈরি করা যায় যা স্বাদে লোভনীয়। এর পাশাপাশি খেজুরের রসের যেমন চাহিদা রয়েছে জয়নগরের মোয়া তৈরিতে তেমনি এর ব্যাপক বাজার রয়েছে। আর এই মুহূর্তে সুন্দরবনের নদী বাঁধগুলিতে জোর কদমে চলছে তাল ও কেওড়ার বীজ রোপনের কাজ। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক শিক্ষিকা ও সুন্দরবনের মৎস্যজীবী থেকে পরিবেশবিদরা উৎসাহের সঙ্গে তালের আঁটিও কুড়িয়ে রাখছে। কুলতলী ব্লকের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সেই আঁটি নিয়ে যাচ্ছে নদীর পাড়ে, রোপণ করছে সেই বীজ। তাদের একটাই উদ্দেশ্য নদী ভাঙন আটকানো। গত দু’বছর ধরে বোদাখালি গ্রামে এভাবেই বাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে শিক্ষকের নেতৃত্বে পড়ুয়ারা। আর এই বছর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলতলী ব্লকে এমনি কাজ শুরু হয়েছে।
আয়লা থেকে ইয়াস একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত সুন্দরবনের নদীবাঁধ। একের পর এক বাঁধে ধরেছে ফাটল, ভাঙন ও শুরু হয়েছে। কেন এই ভাঙন? কারণ খুঁজতে গিয়ে কাকদ্বীপের শিক্ষক রামপদ মণ্ডল দেখতে পান নদীর বাঁধে পর্যাপ্ত গাছের অভাব রয়েছে বা যেসমস্ত গাছ রয়েছে তার শিকড় মাটির বেশি গভীরে যায় না। সমস্যা সমাধানে তিনি নদীর তীরে তাল ও খেজুর জাতীয় গাছ বসানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই কাজে তিনি সঙ্গে নেন এলাকার স্কুল পড়ুয়াদের। সেইমতো পাকা তাল সংগ্রহ করে সেই তালের বীজ বা আঁটি সংগ্রহ করে রাখেন এবং সেই আঁটি সকালে উঠে নদীর তীরে রোপণ করেন। এবিষয়ে বলতে গিয়ে কুলতলী বিধানসভার বিধায়ক গণেশচন্দ্র মন্ডল বলেন ‘বাঁধ রক্ষার জন্য সাধারণ গাছ লাগিয়ে লাভ হবে না। তাল বা খেজুর জাতীয় গাছ লাগাতে হবে। কারণ এর শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত গিয়ে মাটিকে ধরে রাখে। সেজন্যই আমরা তাল গাছ রোপণ করি।’
কুলতলী পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শাহাদাত শেখের কথায় ‘তালের শিকড় বহুদূর পর্যন্ত যায়। সেজন্যই আমরা শিক্ষকদের নিয়ে নদীর পাড়ে তালের আঁটি নিয়মিত রোপণ করা হচ্ছে।’ কুলতলী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহন দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ হাড়োমনি নস্করের কথায় সকল কর্মাধ্যক্ষরা এই কাজে এগিয়ে এসেছেন ,জনপ্রতিনিধি সহ স্কুলের শিক্ষক থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সুচন্দন বৈদ্যকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম বোলপুর- মঠ ও মিশনের সম্পাদক মহারাজ স্বামি নির্মলা নন্দ মহারাজ আমাদেরকে এ বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তার কথাও জানান। আমরা বিনা পারিশ্রমিকে যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি তাতে ক্ষতি কি।