নৌকাডুবির পরেও হুস ফেরেনি প্রশাসনের, রান্না করার ডেচকি এখন নৌকা

মহম্মদ নাজিম আক্তার, নতুন গতি, মালদা: বর্ষায় ক্রমশ জল বাড়তে শুরু করেছে মহানন্দায়। বিপাকে পড়েছে মালদা জেলার চাঁচল-১ নং ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা। জল বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে স্রোতের গতিবেগও। একদিকে করোনা আতঙ্ক ওপরদিকে বন্যার জলে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে রয়েছে সম্পূর্ণ গ্রামবাসী। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। তাদের দুরবস্থার কথা শুনতেই সোমবার চাল, ডাল ও আলু নিয়ে উপস্থিত হন মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন।

    রফিকুল হোসেন জানান ওই গ্রামের বাসিন্দারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার চলে বারোমাস। খিদিরপুর-ভোবানী পুর ঘাট সংযুক্ত মহানন্দা নদীর উপর বাঁশের বা পাকা কোনও সেতু না থাকায় খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের প্রায় ১২০০ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা নৌকা। গ্রামের সাধারণ মানুষ, ছোটো-বড়ো, বার্ধক‍্য সকলেই প্রতিদিন জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই কোন রকম যাত্রী সুরক্ষা ছাড়াই নৌকাতেই পারাপার করেন। এদিন বিডিও ও এসডিও র সঙ্গে আলোচনা করেই শিঘ্রই নদী পারাপারের জন্য নৌকা, লাইফ জ্যাকেট করে দেওয়ার আশ্বাস দেন রফিকুলবাবু।

    উল্লেখ্য সম্প্রতি ওই এলাকার জগন্নাথপুর নৌকাডুবির ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নৌকাতেই যাতায়াত করছেন সাইকেল, মোটর সাইকেল সহ মানুষ। এলাকার মানুষের অভিযোগের খবর পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা নদী পার করে পৌঁছে যায় ভবানীপুর গ্রামে। ওখানে গিয়েই মানুষের অভিযোগের প্রমাণ ধরা পড়ে তাদের ক্যামেরায়। সূত্র মারফত জানা যায়, খিদিরপুর ঘাটটি পূর্বে পঞ্চায়েত সমিতির আওতায় ছিল। বর্তমানে তা আর ডাক দেওয়া-নেওয়া হয় না। গ্রামবাসীরা নিজেরাই নৌকা ভাড়া করে যাতায়াত করে।

    গ্রামে প্রবেশ করতেই এলাকার মানুষ নীলিমা বিবি, দোস্ত মহম্মদ, সুলতান আলি ও আজিজুর রহমানরা জানান গ্রামে প্রায় ১২০০ জন মানুষের বসবাস। মানুষ প্রতিদিন এই নদীপথ দিয়েই চাঁচলে ও পার্শ্ববর্তী জেলা উত্তর দিনাজপুর যান। গ্রীষ্মকালে হাঁটু জল থাকলেও বছরের বেশীরভাগ সময় মহানন্দায় প্রচুর পরিমানে জল থাকায় নিত্য যাত্রীদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। তবে প্রশাসন ঘাট গুলি বন্ধ করলেও নিজস্ব নৌকা নিয়ে বাধ‍্য হয়ে গ্রামবাসীরা জীবিকা নির্বাহ করছে। কারন এপারেই তাদের সব কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সর্বত্রই।

    তারা আরো জানান জল বাড়ছে এই আতঙ্কে আমরা নদী পার হচ্ছি না। এখন হঠাৎ কোনো ব‍্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা দুর্ঘটনা ঘটলে সঠিক সময়ে নৌকা পাওয়া যায় না।তা প্রসূতিদের জন‍্যও একি অবস্থা।
    নৌকা পাওয়া গেলেও নিরাপত্তাহীন ভাবে পারাপার হতে হয়। সুরক্ষা বলতে আমাদের মধ‍্যে কিছুই নেই। অবিলম্বে প্রশাসন যেন সঠিক সময়ে সর্বক্ষন নৌ-চলাচল ও সুরক্ষার জন‍্য লাইফ জ‍্যাকেট প্রদান করে,প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তারা। করোনা মহামারীতে সচেতনতার এক নিদারূণ ছবি পাওয়া গেছে ওই গ্রামে। সবাই গ্রামেই আবদ্ধ হয়ে রয়েছে।

    গ্রামের এক দক্ষ মাঝি জানান, যাত্রী সুরক্ষা বিষয়ে প্রশাসনের তরফে তাদের কোনও নির্দেশ বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়নি। তিনি দাবী করে বলেন, দূর্ঘটনা যেকোনও সময় ঘটতেই পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই নৌকায় তাদের পারাপার করছেন বলে তিনি জানান।

    চাঁচল ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি সেচ ও সমবায় দপ্তরের কর্মাধ‍্যক্ষ সাহাজান আলম জানান, ওই গ্রামবাসীর যাতায়াতের ভরসা একমাত্র নৌকাই। ‘বিশেষত বর্ষায় নদীতে যখন প্রচুর জল থাকে তখন সমস্যা আরও তীব্র হয়। তবুও প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় তাঁদের। যাত্রীদের সুরক্ষার জন‍্য ও অতিরিক্ত নৌ-ব‍্যবস্থার জন‍্য চাঁচলের মহকুমা শাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে।

    এবিষয়ে চাঁচলের মহকুমা শাসক সব‍্যসাচী রায় জানান, ওই গ্রামের মানুষের নদী পারাপারে সুরক্ষার জন‍্য পযার্প্ত লাইফ জ‍্যাকেট ও বয়ারের জন‍্য নির্দেশ দেওয়া হবে বিডিওকে। ফেরীঘাট টি ডাক নাহলে তারও ব‍্যবস্থা করা হবে।