বাঁকুড়ায় সেতু বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এলাকাবাসীদের কাতর আর্জি দ্রুতগতিতে তাদের স্থায়ী সেতু নির্মাণ

নিজস্ব সংবাদদাতা : বাঁকুড়া জেলায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদনদী রয়েছে। তার মধ্যে বাঁকুড়া সতীঘাট সংলগ্ন শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী নদী। এটি দ্বারকেশ্বর নদের একটি উপনদী। এই নদী পথ প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। বাঁকুড়ার মানুষ গন্ধেশ্বরী নদীকে ছোট নদী বলেই চেনেন। তবে বৃষ্টি এলেই এই গন্ধেশ্বরী নদী এক ভয়ঙ্কর রূপে রূপান্তরিত হয়। বাঁকুড়া জেলার পশ্চিম সীমানায় শালতোড়া থানার কুলুরবাঁধ এলাকা এই নদীর উৎসস্থল বলে জানা যায়।
এই গন্ধেশ্বরী নদীর উপর দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি সেতু। প্রতিবছর এই সেতুর উপর দিয়ে বর্ষাকাল এলেই অবিরাম বয়ে চলত জল। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর নাব্যতা কমে আসছিল৷ একটা আস্ত নদী সরু খালের চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছিল। ২০২১ সালের বর্ষায় এই শহরের জুনবেদিয়া, কেশিয়াকোল, সতীঘাট, রামকৃষ্ণপল্লী সহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বর্ষাকালের ওই কয়েকটা দিন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকত না। তার কারণে শুরু করা হয়েছিল নদী সংস্কারের কাজ। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করে গন্ধেশ্বরী নদীর নাব্যতা বাড়াতে খননকার্য শুরু করেছিল বাঁকুড়া সেচ বিভাগ। ২০১৮ সালের প্রবল বর্ষণে গন্ধেশ্বরীর সেতু ভেঙে পড়ে।কিন্তু এই সেতুর বিকল্প হিসেবে আরেকটি বড় সেতু থাকায় যান চলাচল সেই ভাবে ব্যাহত হয়নি। তবে গন্ধেশ্বরী নদীর বিপরীত প্রান্তে থাকা বিকনা, কেশিয়াকোল-সহ একাধিক গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকখানি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সমস্ত এলাকার মানুষকে পৌর এলাকায় ঢুকতে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। বাঁকুড়া শহরে প্রবেশ করতে এই গন্ধেশ্বরী সেতু ছিল যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম। যদিও বিকল্প হিসেবে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে বড় সেতু। তবে এক প্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছিল নদীর ওপারে থাকা সাধারণ মানুষজনদের।সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি স্থায়ী সেতুর। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর এখনও সেই স্থায়ী সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। তবে নদীর বিপরীত প্রান্তে থাকা কেশিয়াকোল, বিকনা-সহ একাধিক গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাঁকুড়া পৌরসভা থেকে করে দেওয়া হয়েছিল একটি অস্থায়ী রাস্তা সেই রাস্তাও প্রবল বর্ষণে জলের তলায় তলিয়ে যায়। এরপর পৌরসভা থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয় একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু। তবে সেই কাঠের সেতুও মজবুত নয়। আর সেই সেতুর এখন বেহাল দশা। নড়বড়ে কাঠের অস্থায়ী সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেশিয়াকোল,বিকনা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের।কয়েকদিন আগেই গন্ধেশ্বরীর নদীর জল কানায় কানায় ভরে যাওয়ায় সেই সেতুতে যানবাহন থেকে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বাঁকুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষনের অভাব আর ভারী মাল বোঝাই ভুটভুটি,যাত্রী বোঝাই টোটো এমনকি ছোটো মালবাহী গাড়ী পারাপার করায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে এখন নড়বড়ে দশা এই সেতুর। জলের তোড়ে সেতু দুলে ওঠে। গত ক’দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে খুঁটিতে ঠেক দেওয়া বালির বস্তা ফেটে চৌচির। টিনের ড্রাম মরচে ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর কাঠের খুঁটি দিন দিন শক্তি হারাচ্ছে। পাশাপাশি সেতুর ওপর কাঠের পাটাতন থেকে কাঠ ওপরে উঠে উঁকি দেওয়ায় তাতে হোঁচট খেয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। আপাতত নদীর জল কমায় সেই রাস্তা খুলে দেওয়া হলেও বিপজ্জনকভাবেই নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন সাধারণ মানুষজন।বাঁকুড়া শহরেই রয়েছে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল আদালত এবং থানা। তাই বাঁকুড়া শহরে প্রবেশ করতে ঘুরপথে যেতে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হচ্ছে। তার উপর বাঁকুড়ার বড় সেতুও বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বড় বড় গর্ত,যেকোনও সময় ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীদের কাতর আর্জি দ্রুতগতিতে তাদের স্থায়ী সেতু নির্মাণ কাজ করুক জেলা প্রশাসন। তাহলে হয়তো তাদের এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলবে। বাড়ির ছোট্ট ছেলে মেয়েদের স্কুল-কলেজ আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা মিটবে এবং গ্রামবাসীদের দাবি দীর্ঘদিন এভাবেই পড়ে রয়েছে এই স্থায়ী সেতুর নির্মাণ কাজ। বর্ষাকাল এলেই সেতু নির্মাণের জন্য তৎপরতা বাড়ে আবার তারপরেই ধীরগতিতে চলে এই নির্মাণ কাজ। এই স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উপকৃত হবেন গন্ধেশ্বরী নদীর বিপরীত প্রান্তে থাকা বিভিন্ন গ্রামগুলি অপরদিকে বাঁকুড়া দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বেশি সচল হবে।