|
---|
দিনাজপুর: ডিজিটাল জেনারেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম ইন্টারনেটের প্রভাবে বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীণ বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম সিনেমা হল। সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও বহু সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোনও কোনও সিনেমা হল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এখন। এমন কিছু সিনেমা হলের সন্ধানে বেরিয়ে ধরা পড়লো কিছু ছবি।
দর্শক না থাকার দরুণ দিনের পর দিন লোকসানে পড়া বিভিন্ন সিনেমাহলের মালিক কর্তৃপক্ষ। এক এক করে বহু পুরাতন সিনেমা হলগুলি বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে কাজ হারাচ্ছেন বছরের পর বছর সিনেমা হলের বহু কর্মীরা। ফলে কাজ হারিয়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরেও ছিল অনেক সিনেমা হল। সে আজ থেকে বছর দশেক আগেকার কথা। ওই সময় এইসব সিনেমা হলগুলিতে রমরমা বাজার ছিল। সারাদিন কাজের পর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজাটাই ছিল আলাদা। আর এইসব সিনেমা হলগুলিতে বহু কর্মী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু সে সব এখন ইতিহাস। সময়ের সাথে বদলাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। হলে গিয়ে সিনেমা দেখার জায়গাটা আজ করে নিয়েছে সিরিয়াল। ইন্টারনেটের যুগে সিনেমা হলে গিয়ে টানা তিন ঘন্টা এক জায়গায় বসে সময় নষ্ট করার পাশাপাশি পয়সা খরচ না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ঘরে বসে পছন্দ অনুযায়ী সিনেমা দেখার জন্য আজ আর সিনেমা হলে দর্শক পাওয়া যায় না। যদিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু ফ্রি-মুভিজ দেখা যায়, কিন্তু বাকি সবই পয়সা দিয়ে দেখতে হয়।
তাই বছরের পর বছর লোকসান হতে হতে আজ এইসব এলাকার বহু সিনেমা হলগুলি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন হলের মালিক কর্তৃপক্ষ। তার বদলে সেই সিনেমা হল পরিণত হয়েছে গুদামে। আর জেলার গঙ্গারামপুরের বর্তমানে একটি সিনেমা হল ঠিকঠাক দর্শক না হওয়ায় টিপটিপ করে লন্ঠনের আলোর মতো চলছে। গঙ্গারামপুরের এক বিনোদনপ্রেমী বিশ্বপ্রিয় সাহা দুঃখের সাথে জানান, আগে প্রচুর মানুষ সিনেমা হলে আসত সিনেমা দেখতে, কিন্তু এখন আর আসে না তার কারণ একটাই- এখন ভালো কোনো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। সমস্তটাই হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক, তাই গ্রাম বাংলার মানুষরা এই সিনেমা দেখতে আর আসছে না সিনেমা হলে। এর পাশাপাশি হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট মোবাইল এবং ইউটিউব চলে আসায় নিত্যনতুন সিনেমাটা তাঁরা পেয়ে যাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে। তাই তাদের আর আসতে হচ্ছে না সিনেমা হলে, ফলে আজ সিনেমা হলগুলি বন্ধ হতে বসেছে। আগামীতে লাভের মুখ দেখতে না পেলে সিনেমা হলগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন হলমালিকের একাংশ। অপরদিকে জেলার বুনিয়াদপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী গৌরী সিনেমাহলের মালিক ফান্টু সেন জানান, কতদিন তাঁরা আর লোকসানে বিনোদন দেবেন- মানুষকে নিজেদের ঘরের পয়সা ঢেলে আর কতদিন লাগাবেন? কারণ একটা সিনেমা আনতে যেমন প্রচুর খরচসাপেক্ষ, তেমনি সারা মাসে সিনেমা চালিয়ে তার সিকিভাগও লাভ উঠে আসে না। তাই বাধ্য হয়ে সিনেমাহল তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই করার নেই প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে গেছেন। এখন সেই সিনেমা হলে মালপত্র রাখা হয়। অপরদিকে জেলার গঙ্গারামপুর দত্তপাড়ার এক উঠতি যুবক শান্তনু ঘোষ জানান, একটা সময় তাঁরা বাড়ির সকলে মিলে এসে সিনেমা হলগুলিতে সিনেমা দেখতে আসত। কত মজা হত, কিন্তু আজ সেই মজা নেই কারণ এখন সেই সিনেমা হলগুলি আগের অবস্থায় নেই। পাশাপাশি হাতের মুঠোয় এখন ইন্টারনেট মোবাইল চলে আসায় এখন সব সিনেমা সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দেখে ফেলছেন। ফলে সিনেমামুখী হওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। মানুষের মধ্যে এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অপরদিকে, বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলার গঙ্গারামপুর শহরের কালিতলায় অবস্থিত “রপকথা” সিনেমা হলের পাশে দীর্ঘদিন ধরে পান বিড়ি সিগারেটের দোকানদার নিতাই সরকার জানালেন, তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই সিনেমা হলের পাশে দোকান করছেন। একটা সময় প্রচুর মানুষ সিনেমা দেখতে আসত। তাঁর চোখে দেখা, মানুষের লম্বা লাইনে টিকিট কাটার ধুম ছিল আলাদাই। কিন্তু আজ সেই সব হারিয়ে গেছে। এখন হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন দর্শক ভীড় জমান সিনেমা হলে। একটা সময় নির্জন জায়গায় টানা তিন ঘন্টা সকলের অজান্তেই প্রেমিক-প্রেমিকাদের উত্সাহ যোগাতে নির্জন জায়গায় বক্সের ভাড়া ছিল আকাশ ছোঁয়া। এইভাবে লোকসান ঠেকাচ্ছিলেন হল কর্তৃপক্ষরা। কিন্তু সেখানেও বাধা পুলিশের। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সিনেমা হলগুলির ওইসব বক্সে রেট করে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাও। সব মিলেয়ে বর্তমানে সিনেমা হলগুলি এখন ধুঁকছে।