রেশম আর হস্ত শিল্পের চোখ ধাঁধানো শিল্প নৈপুণ্যে বুঁদ হয়েছিলেন ইউরোপীয়রা

নিজস্ব প্রতিবেদক:- সে ছিল একসময়, যখন ভারতের মসলিন, রেশম আর হস্ত শিল্পের চোখ ধাঁধানো শিল্প নৈপুণ্যে বুঁদ হয়েছিলেন ইউরোপীয়রা। বিদেশি বণিকদের বাণিজ্যিক বদান্যতায় ইউরোপের বাজার তখন ছেয়ে থাকত ভারতের রেশম সুতিবস্ত্র ও নানান হস্ত শিল্পের সম্ভারে। কিন্তু শিল্প বিপ্লব আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাশার দানে উল্টে গেল সেই রমরমা। বিদেশের কলজাত কাপড়ের কাছে হার মেনে বাজার থেকে বিদায় নিল মসলিন সহ রেশম বালুচরী শাড়ি। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে বালুচরীর উৎপত্তি অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে। নবাব মুর্শিদ কুলি খান তাঁর রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করার পর, নবাব মুর্শিদ কুলি বেগমদের জন্য শাড়ি বোনার বরাত দেন মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামের দক্ষ কারিগরদের। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় নানান পৌরাণিক কাহিনী কে বুকে নিয়ে গড়ে ওঠে রেশমের বালুচরী শাড়ি। কিন্তু গঙ্গা তীরবর্তী বালুচর গ্রাম বারবার বন্যায় বিধ্বস্ত হলে বয়নশিল্পীরা আশ্রয় নিলেন মল্লভূম বিষ্ণুপুরে। ইংরেজদের ঔপনিবেশিক নীতির ফলে বিশ শতকের গোড়ায় অন্যান্য বয়ন শিল্পের মতই হারিয়ে গেল বালুচরী শিল্প। স্বাধীনতার পরে ঠাকুর বাড়ির অন্যতম ব্যক্তিত্ব সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে আবার বালুচরী শিল্পে জোয়ার আসে। অষ্টাদশ শতকে যে বয়ন শিল্প ঘিরে মুর্শিদাবাদের নাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল একবিংশ শতকে এসে জেলার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারী উদ্যোগে দেওয়া শুরু হল বালুচরীর শিল্পীদের ট্রেনিং । বালুচরী শাড়ির শ্রীবৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন । এলাকার বাসিন্দাদের স্বর্নিভর করার লক্ষ্যে নিয়ে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের গণকরের বিজয়পুর সিল্ক খাদি সেবা সংস্থায় সূচনা হল তাঁতিদের প্রশিক্ষণ শিবিরের। প্রাথমিকভাবে বালুচরী শাড়ির ওপরে কাজের প্রশিক্ষণ নেবেন ২৫ জন শিল্পী । বহু মহিলাও কাঁথা স্টিচের কাজের নতুন নতুন ডিজাইনের প্রশিক্ষণ নেবেন। উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী, পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে প্রমুখ। হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের জেলা আধিকারিক দেবর্ষি রায় ও খাদি দপ্তরের কর্মকর্তারা। উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে বালুচরীর উপরে কাঁথা কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুন নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে বালুচরীর ঐতিহ্য, সুনাম এবং সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলা এবং কর্মসংস্থানের ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের। বালুচরী শাড়ির ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই নতুন মোড়কে এই পরিবেশনের ভাবনা। শিল্পীরাও আশাবাদী ।