আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে চার ঘন্টার ‘‌রেল রোকো’ কর্মসূচির ডাক কৃষকদের‌

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: কেন্দ্রের বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ‌আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে ‘‌রেল রোকো’‌ কর্মসূচি নিল বিক্ষোভকারী কৃষক সংগঠনগুলি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি গোটা দেশজুড়ে চার ঘন্টার ‘‌রেল রোকো’‌ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, বুধবার জানাল কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা। শুধু তাই নয় বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শুক্রবার থেকে রাজস্থানের কোথাও টোল সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না।

    কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে চলতি মাসের শুরুতেই তিন ঘন্টা রাস্তা অবরোধের কর্মসূচি নিয়েছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। টোল প্লাজা ভাঙচুর ও অবরোধ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের নিশানা করে এদিন সংসদের নিম্নকক্ষে দাড়িয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, ‘‌কৃষক আন্দোলনকে আমি পবিত্র মনে করি। আন্দোলনজীবীরা পবিত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়লে কী হয় দেখেছেন!‌ টোল প্লাজায় ভাঙচুর চালানো কি পবিত্র আন্দোলন।

    সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা এদিন বলেছেন, কৃষকরা ৭৫ দিন ধরে দিল্লির সীমান্তে বসে আছে। সরকারের কাছে বারংবার আবেদন করেছে তিন আইন তুলে নিতে। সরকার যতবার ডেকেছে, প্রত্যেক বারই আলোচনায় উপস্থিত হয়েছে। কৃষকরা চেয়েছিলেন সরকার পরিস্থিতি উপলব্ধি করুক, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুক। কিন্তু তার বদলে সরকার আক্রমণের পথ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজও দু’ঘণ্টা ধরে মিথ্যা কথা বলেছেন, গাল পেড়েছেন, কৃষকদের বদনাম করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আন্দোলন ছাড়া কৃষকের কাছে অন্য রাস্তা নেই। সরকারের হাতে পুলিশ আছে, আধা সেনা আছে, দুষ্কৃতী আছে। সবই ব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধী হলেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কৃষকের একমাত্র রাস্তা আন্দোলন। সংবিধান আন্দোলন, প্রতিবাদের অধিকার দিয়েছে। কৃষক সেই অধিকারই প্রয়োগ করবে। সংযুক্ত কৃষক মোর্চা বৈঠকে বসে ঠিক করেছে আন্দোলন লম্বা হবে।

    মোর্চার সিদ্ধান্ত রাজ্যে রাজ্যে যে মহাপঞ্চায়েত হচ্ছে তা চলতে থাকবে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থানে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ কৃষক পঞ্চায়েতে অংশ নিচ্ছেন। তা আরও হবে। মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতারা সেইসব সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। গ্রামে গ্রামে ওই পঞ্চায়েত হতে থাকবে। হরিয়ানাতে ইতিমধ্যেই কৃষক টোল প্লাজা খুলে দিয়েছে। আন্দোলনের এই পর্বে রাজস্থানে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হবে। সমস্ত সড়ক হবে টোল-মুক্ত।

    ২০১৯-র ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন সেনারা। সেই নিহত জওয়ানদের স্মরণে, কৃষক আন্দোলনে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারানো ২০০ শহীদের স্মরণে ওইদিন দেশজুড়ে মশাল মিছিল হবে। হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাতটায় দেশজুড়ে সমস্ত গ্রাম-গঞ্জে, শহরে ওই মশাল মিছিল হবে। জনগণের সমস্ত অংশ, গণতান্ত্রিক সংগঠনকে ওই মিছিলে শামিল হতে কৃষক মোর্চা আহ্বান জানিয়েছে।

    ১৬ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের বিশেষ করে পাঞ্জাবের কৃষক নেতা ছোটুরামের জন্মদিবস। সেইদিন দেশজুড়ে কৃষকরা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে সভা-সমাবেশ করবেন। বিশেষ করে আন্দোলনের কথা ব্যাখ্যা করে বলবেন। সরকারের মিথ্যাচারের জবাব দেবেন। কৃষক মোর্চার ডাকে ৮ ডিসেম্বর সারা ভারতে হরতাল হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি হয়েছে দিল্লিতে ও অন্যান্য রাজ্যে কৃষক প্যারেড। রেল রোকো করে কৃষকরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দেবেন, এখনও আইন প্রত্যাহার না করলে আরও বড় আন্দোলনের মুখে পড়তে হবে। হান্নান মোল্লা এদিন জানান, সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির নেতৃত্বের মধ্যে যৌথ একটি বৈঠক হতে চলেছে। সেই বৈঠক থেকে কৃষক-শ্রমিক যৌথ আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হবে।