|
---|
মালদা, নতুন গতি, ১৫ মার্চ : দিন মজুরির কাজ করে কোনো রকমে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশুয়া দাস। কিন্তু বিধাতা বিমুখ,২৮ বছর বয়সে চোখের অসুখ ধরা পড়ে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করানো হয়ে ওঠেনি আর। অসুখের পর থেকেই দুই চোখে দেখতে পাননা তিনি। তারপর ৩৪ বছর পার হলেও প্রতিবন্ধী শংসাপত্র মেলেনি। চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটলেও মেলেনি আবাস যোজনায় ঘর বলেও অভিযোগ। মেলেনি বার্ধ্যক্য ভাতাও। প্রৌঢ়া স্ত্রী দিনমজুরি করে যেটুকু আয় করেন তাতেই সংসার চলে। বন্ধের মুখে ছেলের পড়াশুনা। কেন না সংসারের কথা ভেবে একসময়ের দিনমজুর বিশুয়াকে মাঝেমধ্যে ভিক্ষে করতে বের হতে হয়। সঙ্গী হয় একমাত্র ছেলে। আবার একবার দরজায় কড়া নাড়ছে ভোট। কিন্তু ভোট দিয়ে কি লাভ, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ৬৪ বছরের বৃদ্ধ বিশুয়া দাস। আর কতটা অভাবি হলে সরকারি সাহায্য মিলবে, বিশুয়ার পরিবারের পাশাপাশি সেই প্রশ্ন তুলেছেন তার প্রতিবেশীদেরও একাংশ। পাশাপাশি বিষয়টিকে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। কাটমানি দিতে না পারায় বিশুয়ার সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুরে বাড়ি বাশুয়া দাসের। বাড়ি বলতে ভাঙাচোরা মাটির ঘর। ঘরের দরজা-জানালাও নেই। ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী কুশমি, ১৪ বছরের ছেলে বলরাম ছাড়াও রয়েছেন মেয়ে জয়ন্তী ও তার নাবালক ছেলে। সরকারি সাহায্য না মেলায় সংসার চালাতে জেরবার হতে হচ্ছে প্রতিবন্ধী বিশুয়াকে। অথচ এমনটা ছিল না। একসময় দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু ২৮ বছর বয়সে তার চোখের সমস্যা শুরু হয়। চোখে ছানি পড়ে যায়। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিত্সা করাতে পারেননি। ফলে কিছুদিন বাদে দু চোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় বিশুয়ার। কিন্তু তারপর ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কেন বিশুয়ার প্রতিবন্ধী শংসাপত্র মেলেনি সেই প্রশ্ন উঠেছে। শিবিরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের। কিন্তু তাদের কেউ বিশুয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। এলাকায় অবস্থাপন্ন মানুষদের আবাস যোজনায় ঘর মিললেও ওই পরিবারটির মেলেনি বলে অভিযোগ।
বিশুয়া দাস সাংবাদিকদের সামনে তার জবানবন্দিতে জানান, “আমার চোখ অন্ধ। অনেক জায়গায় দেখিয়েছি কিন্তু কিছু ঠিক হয়নি। এখন আর কিছু দেখতে পাইনা। প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম কিন্তু কোনো সাহায্য করেননি। প্রধানও কোনো সাহায্যের ব্যবস্থা করেননি। স্ত্রী কাজ করে, এখন ঘরে বসে আছি। ঘরের জন্য আবেদন করেও ঘর পাইনি। দু-পা হাঁটতে গেলেও ছেলের সাহায্য নিতে হয়।”
বিশুয়ার প্রৌঢ়া স্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন সরকারের উপর। তিনি জানান, “আমার স্বামীর ত্রিশ বছর ধরে অন্ধ। আমি এদিক ওদিক খেটে কোনোরকমে সবার খাবার জোগাড় করি। লোকের কল থেকে জল আনি, তারা দিতে চায়না তাও যেতে হয়। পায়খানা নেই, ঘর নেই। কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইনি। শুধু রেশনটুকু পাই। প্রধান বলে আমরা কিছু করতে পারবোনা। সরকার আমাদের কিচ্ছু দিচ্ছেনা তো ভোট দিয়ে কী করব?” সংবাদ মাধ্যমের সামনে কান্না জড়ানো গলায় তার স্বামীর চিকিৎসার আর্তি জানিয়েছেন তিনি।
মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকার সদস্যা দীপ্তি কর্মকার বলেন, “পরিবারটি অভাবি। দুয়ারে সরকার চলার সময় প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের জন্য শিবিরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি যাননি। আর আবাস যোজনার জন্য ওদের নাম পাঠানো রয়েছে। কিন্তু এত বছরেও কেন প্রবন্ধী শংসাপত্র মেলেনি, মেলেনি আবাস যোজনায় ঘর তার উত্তর পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছে মেলেনি।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন,” আপনাদের মাধ্যমে খবরটি জানতে পারলাম। সকল প্রতিবন্ধীই প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পেয়েছে। সাথে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এক্ষেত্রে হয়তো কোনো রকম মিস কমিউনিকেশন হয়েছিল। এই মুহূর্তে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আমরা কিছু করতে পারবো না। নির্বাচনের পরে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দলগতভাবে ও অন্ধ অসহায় ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবো।”
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
বিজেপি নেতা রূপেশ আগারওয়ালা বলেন,” এরকম শুধু একজন বিসুয়া দাস নয় বাংলা জুড়ে হাজার হাজার রয়েছে। সে অন্ধ ব্যক্তি। কাটমানি দিতে পারেনি। তাই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পায়নি। এই সরকার কাটমানির সরকার।২ রা মে ভোট বাক্সতে মানুষ এর জবাব দেবে। বিজেপির সরকার আসার পর সকল সমস্যার সমাধান হবে।”
যে মানুষটি পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না সেই যে কতটা অসহায় সে শুধু নিজেই জানে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ মানুষের সমস্যার সমাধান করা। তাই রাজনৈতিক তরজা ছেড়ে যে কোন দলেরই উচিত অসহায় অন্ধ এই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো।