দুবছর আগের বন্যায় ভেঙে যাওয়া সেতু তৈরি না হওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার শতাধিক গ্রামের মানুষ

শুভ চক্রবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর:-দুবছর আগের বন্যায় ভেঙে গিয়েছে একাধিক জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতু,নতুন করে সেইসব জায়গায় সেতু তৈরি না হওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার শতাধিক গ্রামের মানুষ।

    অগত্যা নদী পারাপারে গ্রামবাসীরাই নিজ উদ্যোগে কোথাও বাঁশের সাঁকো তো আবার কোথাও কাঠের সেতু তৈরি করে নদী পারাপার করছে।দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী কংক্রীট ব্রীজ তৈরির দাবি জানিয়েও না মেলায় চরম ক্ষোভ এলাকাবাসীর পাশাপাশি শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্য থেকে বুথস্তরের তৃণমুল কর্মীরাও।সামনেই পঞ্চায়েত ভোট এবার ভোটে খালি নেতাদের প্রতিশ্রুতি নই,দ্রুত স্থায়ী ব্রীজ তৈরির উদ্যোগ নিক সরকার চাইছেন নদী পারাপারে ভুক্তভোগীরা।এলাকাবাসীর দাবিতে সুর মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি।*

    ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চৈতন্যপুর,ধরমপোতা ও চাষীবাড় এলাকার।এই তিন এলাকায় শিলাবতী ও কেঠিয়া নদীর উপর ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে তৈরি করা হয়েছিল চৈতন্যপুর,ধরমপোতা ও চাষীবাড় এলাকায় তিন তিনটি কাঠের সেতু।জানাযায়,এক একটি কাঠের সেতু তৈরিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের আনুমানিক খরচ পড়েছিল ১৫ লক্ষ টাকা করে।গত দুবছর আগে ভয়াবহ বন্যায় ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শিলাবতী ও কেঠিয়া নদীর উপর চৈতন্যপুর,ধরমপোতা ও চাষীবাড় এলাকার তিন তিনটি কাঠের সেতু ভেঙে পড়ে বা কোনোটি জলের তোড়ে সম্পুর্ন তলিয়ে যায়।আর তারপর থেকে দুবছর কেটে গেলেও এইসমস্ত জায়গায় নতুন করে করে আর সেতু তৈরির উদ্যেগ নেয়নি ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এমনই অভিযোগ ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের।জানাযায়,ভগবন্তপুর-১ ও ভগবন্তপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রামের মানুষের শিলাবতী ও কেঠিয়া নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা ছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি এই তিনটি কাঠের সেতু।এজেলার পাশাপাশি পাশ্ববর্তী হুগলি জেলার একটা অংশের যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে এই কাঠের সেতুগুলিকেই ব্যবহার করা হত।দু’বছর কেটে গেলেও সরকার ওই সমস্ত এলাকায় নতুন করে সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়নি,এমনকি বাম আমল থেকে ভগবন্তপুর-১ ও ভগবন্তপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সাথে সংযোগস্থাপনের জন্য শিলাবতী নদীর উপর একটি স্থায়ী কংক্রিট ব্রিজের দাবি জানিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়ে আসলেও বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলেও তা কার্যকর হয়নি।আর এতেই ক্ষুব্ধ দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক গ্রামের মানুষ।তাদের অভিযোগ,প্রতিবছর বন্যার সময় নদী পারাপারে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়,কৃষি প্রধান এলাকা হওয়াতেও চাষের কাজেও নদী পারাপারে সমস্যায় পড়তে হয় এলাকার চাষিদেরও।ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হুগলি জেলা থাকায় কৃষ্ণপুর হয়ে শিলাবতী নদী পেরিয়ে ধরমপোতা বা চৈতন্যপুর হয়ে কম সময়ে চন্দ্রকোনা শহরে পৌঁছে যাওয়া যায়,কিন্তু নদীতে জল বেড়ে গেলে বা বন্যার সময় এই পথে বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াত।ফলে অন্য পথ হয়ে অতিরিক্ত ১৫-২০ কিমি ঘুর পথে সেসময় পৌঁছাতে হয় চন্দ্রকোনা শহরে।হাসপাতাল,কলেজ,বিডিও অফিস থেকে থানা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে যেতে হলে নদী পার হয়েই যেতে হয় এলাকাবাসীদের,জরুরি প্রয়োজনেও ভোগান্তির শেষ নেই এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের।জানাযায়,এলাকার মানুষেরাই নিজেরাই চাঁদা তুলে বর্তমানে চৈতন্যপুর এলাকায় একটি কাঠের সেতু বানিয়ে যাতায়াত করছে সরকারি কোনো সাহায্য ছাড়াই আর বাকি দুই জায়গা ধরমপোতা ও চাষীবাড় এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতুর কোনো চিহ্নই নেই।যেহেতু বর্তমানে নদীতে জল তেমন নেই তাই চাষীবাড়ে ভেঙে যাওয়া কাঠের সেতুর পরিবর্তে মাটি ও মোরাম দিয়ে নদীর চর বরাবর তৈরি করে হয়েছে আস্ত একটি রাস্তা তারউপর দিয়ে চলছে অস্থায়ী ভাবে যাতায়াত,কিন্তু প্রশ্ন উঠছে বন্যার সময় নদীগর্ভে এই রাস্তার উপর দিয়ে কি করে যাতায়াত সম্ভব সেতু বা পোল না থাকলে?অপরদিকে ধরমপোতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,২০১৭-১৮ সালে ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃক ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে ওই এলাকায় কানা নদীর উপর তৈরি করা কাঠের ব্রিজ উধাও কারণ দু’বছর আগে বন্যায় এটিও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে,বর্তমানে চিহ্ন হিসাবে পড়ে রয়েছে পঞ্চায়েতের বসানো বোর্ড এবং নদী গর্তে সেতুর কিছু কাঠের টুকরোর অবশিষ্টাংশ।ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান,চাষবাস এবং নিজেদের পারাপারের জন্য গ্রামবাসীরাই নিজ উদ্যোগে ধরমপোতা এলাকায় নদীর উপর বেশকয়েকটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তারউপর দিয়ে আপাতত যাতায়াত করছে।দু’বছর গড়িয়ে গেল বন্যায় ভেঙে যাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েত তৈরি কাঠের সেতু পুনরায় তৈরির কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায়,একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শিলাবতী,কেঠিয়া ও কানা নদীর উপর একাধিক জায়গায় গ্রামবাসীরাই নিজ উদ্যোগে কোথাও কাঠের সেতু তো আবার কোথাও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করলেও তৃণমূল পরিচালিত ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন,ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।যদিও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ইকবাল সরকার সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান,চেষ্টা করছি ব্রীজ গুলি তৈরির কিন্তু ফান্ড না থাকলে কি করবো,যেটুকু টাকা পায় তা দিয়ে রাস্তা ঘাট পানীয়জল থেকে অন্য কাজ করবো না ব্রীজ তৈরি করবো।”এনিয়ে ব্লকের বিডিও অমিত ঘোষ অবশ্য জানান,গত মাসেই ডিজাস্টার ডিপার্টমেন্ট থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোথায় কটা সেতু ভাঙা অবস্থায় রয়েছে,আমরা তা জানিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো প্রপোজাল আমরা জেলায় পাঠিয়েছি।এই ব্রীজগুলো যাতে তাড়াতাড়ি করা যায় তা প্রশাসনের নজরে রয়েছে পাশাপাশি সাংসদ ও বিধায়কও বিষয়টি জানেন।”এদিকে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্রীজের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় গ্রামের মানুষের নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের,বারবার বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কেনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার শাসকদলের এক পঞ্চায়েত সদস্য থেকে বুথের কিছু তৃণমুল কর্মীও।সামনেই পঞ্চায়েত ভোট আর ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দবি স্থায়ী ব্রীজ তা না হওয়া এবং বর্তমানে যাতায়াতে মানুষের চরম ভোগান্তিকে হাতিয়ার করে আসরে নামতে চলেছে বিরোধীরা এমনটাই জানান তারা,এনিয়ে শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি।এখন দেখার ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের নদী পারাপারে জন্য স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হয় কিনা প্রশাসন,নাকি প্রতিবারের মতো আবারও আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের জন্য পুনরায় একবার স্রেফ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য সমস্যা জিইয়ে রাখে কিনা শাসকদল,ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশাবাদী বিরোধীরাও।